মানুষ অপরাধ করলে আইন অনুযায়ী সে সাজা পাবে এটা পৃথিবীর চিরায়িত নিয়ম। কিন্তু আশ্চর্যকর ঘটনা হচ্ছে এই পৃথিবীতেই এমন এক জায়গা রয়েছে যেখানে চরম অপরাধ করেও পার পাওয়া যায়। যেমন কাউকে হত্যা করলেও কোনো সাজা হবে না। শুনতে অবাক লাগলেও এমন জায়গা রয়েছে এই বিশ্বেই। আক্ষরিক অর্থেই সেটি ‘জোন অব ডেথ’।
যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ইদাহো প্রদেশের ইয়েলোস্টোন জাতীয় অরণ্যের প্রায় ১৩০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা হলো ‘জোন অব ডেথ’। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে এমন এক ফাঁক রয়েছে। যার কারণে এই এলাকায় কেউ খুন করলেও তার সাজা তো হবেই না বরং খোলামেলা চলাফেরা করতে পারবে।
মার্কিন সংবিধানের ষষ্ঠ সংশোধনী
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েলোস্টোন জাতীয় অরণ্য আসলে ইউমিং জেলা আদালতের অধীন। ষষ্ঠবার সংশোধিত আমেরিকার সংবিধান অনুযায়ী, কোনও অপরাধমূলক অভিযোগের বিচার করার জন্য নির্বাচিত জুরিদের ওই রাজ্য এবং ওই জেলার নাগরিক হতে হবে। এখানেই বিচারব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়ার দারুণ কৌশল লুকিয়ে আছে। পার্কের ওই অঞ্চল যা ইদাহোর অধীন কোনও মানুষের বসতিই নেই। আসলে পার্কের মধ্যে ইদাহো জেলার যেটুকু অংশ আমেরিকার ইউমিং জেলা আদালতের আওতায় রয়েছে সেটি ‘নো ম্যান্স ল্যান্ড’।
সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী, এই অঞ্চলে কোনও অপরাধ হলে তার বিচার করবেন ইদাহো জেলার ওই অঞ্চলের মধ্যে বাস করা জুরিরা। এখন পার্কের অন্তর্গত ইদাহো জেলার অংশে কোনও বসতিই নেই, তাই সংবিধান অনুযায়ী এই অংশের অপরাধের বিচার করারও কেউ নেই। ফলে একজন খুন করেও পার পেয়ে যেতে পারে অবলীলায়।
আইনি ফাঁক ভরাটে উপন্যাস
এই অঞ্চলের বিচারব্যবস্থার ফাঁক প্রথম চোখে পড়ে মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ব্রায়ান সি কাল্টের। তিনি দেখেন ওই অঞ্চলে জুরি গঠন করার জন্য কোনও নাগরিকই বাস করেন না। ফলে যে কোনও ব্যক্তি মারাত্মক অপরাধ করেও ছাড় পেয়ে যাবেন। এমনকি খুন করলেও সাজা দেওয়ার কোনও উপায় নেই। প্রশাসনের নজর কাড়ার জন্য এই অঞ্চলকে নিয়ে একটি উপন্যাস লিখতে শুরু করেন কাল্ট। উপন্যাসের নাম দেন ‘দ্য পারফেক্ট ক্রাইম’।
কাল্ট আশঙ্কা করেছিলেন তাঁর উপন্যাস পড়ার পর বিচারব্যবস্থার এই ফাঁককে কাজে লাগিয়ে অনেকেই অপরাধ করার জন্য এই অঞ্চলকে বেছে নিতে পারেন। ওই উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার পর কাল্ট ভেবেছিলেন প্রশাসন নড়েচড়ে বসবে। আইনের এই ফাঁক ভরাট করা হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
পরবর্তীতে কাল্ট নিজেই আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ইয়েলোস্টোন জাতীয় অরণ্যের ওই অংশটুকু ইউমিংয়ের অধীন থেকে মুক্ত করে তা ইদাহো জেলা আদালতের অধীন করার আবেদন করেন তিনি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
এরপর ২০০৭ সালে এই অঞ্চল নিয়ে আরও একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়। লেখক সি জে বক্সের লেখা সেই উপন্যাস ‘ফ্রি ফায়ার’ প্রশাসনের নজর কাড়তে সফল হয়। উইমিংয়ের সেনেটর মাইক এনজি এই ফাঁক বন্ধ করতে সচেষ্টও হয়েছিলেন। কিন্তু তেমন কিছুই করতে পারেননি তিনিও। তবে আইনের এই বিশাল ফাঁকফোকর সামনে আসার পরও তেমন কোনও অপরাধ ঘটেনি এই অঞ্চলে।