অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল বাতেন
অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল বাতেন

অধস্তন আদালতের কার্যক্রম পুরোপুরি ভার্চুয়ালি পরিচালনা করা সম্ভব নয়

মো. আব্দুল বাতেন: করোনা পরিস্থিতি বৃদ্ধি পেলেই অধস্তন আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। উচ্চ আদালত থেকে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। গত দুই বছরে এই ধরণের প্রজ্ঞাপন একাধিকবার দেখা গেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ভার্চুয়াল আদালত শুধুমাত্র ফৌজদারী আদালতের জামিন শুনানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অধস্তন আদালতের দেওয়ানী ও ফৌজদারী অন্যান্য কার্যক্রম ভার্চুয়াল আদালতে পরিচালনা সম্ভব হয় না, তার জন্য একচুয়াল আদালতের প্রয়োজন হয়। আইনানুগ কিছু বাধ্যবাধকতা ও প্রচলিত প্র্যাকটিসের কারণে অধস্তন আদালতের সকল কার্যক্রম ভার্চুয়ালি পরিচালনা করা সম্ভব নয়। এর নেপথ্যের কারণসমূহ নিম্নরূপ –

দেওয়ানী আদালতের ক্ষেত্রে

দেওয়ানী আদালতে মোকদ্দমা দায়ের ও জরুরী দরখাস্ত শুনানির জন্য পক্ষদের কখনো আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইনজীবীদের চেম্বার ও হলফনামা সহ অন্যান্য প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সেরেস্তাদারের সামনে গেলেই কাজ হয়ে যায়। কিন্ত সাক্ষ্য প্রদান ও মোকদ্দমা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে পক্ষদের অবশ্যই আদালতের কঠগড়ায় দাঁড়িয়ে জবানবন্দি দিতে হয়। বিচারক নিজে উক্ত জবানবন্দি লিখে পক্ষের স্বাক্ষর নিয়ে থাকেন। তাছাড়া দেওয়ানী আদালতে জরুরী কোন দরখাস্ত দিলে অপর পক্ষের আইনজীবীকে কপি দিতে হয়। অপরপক্ষের আইনজীবী একই সময়ে ভার্চুয়াল শুনানিতে উপস্থিত নাও থাকতে পারে, তখন আদালত উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে শুনানির জন্য বিষয়টি রেখে দেন। এই কারণে দেওয়ানী আদালতের কার্যক্রম পুরোপুরি ভার্চুয়াল করা সম্ভব নয়।

ফৌজদারী আদালতের ক্ষেত্রে

ফৌজদারী আদালতে বিচারিক কার্যক্রমে কয়েকটি বিষয় জড়িত। এরমধ্যে জামিন, চার্জ শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ, আসামি পরীক্ষা ও রায় প্রদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে।

(ক) জামিন: ফোজদারী মামলার শুরুতেই আসে জামিন শুনানি। কোন ফৌজদারী মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির আদালতে আত্মসমর্পণ তার সাংবিধানিক অধিকার। হাজতি আসামির জামিন শুনানি ভার্চুয়ালি সম্ভব হলেও আত্মসমর্পণের জন্য একচুয়াল আদালতের দরকার হয়।

(খ) চার্জ শুনানি: চার্জ গঠন বিষয়ক শুনানিতে আদালত আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করার পর আসামিকে জিজ্ঞেস করে, দোষী না নির্দোষ। তাই চার্জ শুনানিতে আসামির আদালতের কাঠগড়ায় হাজির হতে হয়। এর জন্য একচুয়াল আদালতের দরকার হয়।

(গ) সাক্ষ্যগ্রহণ: ফৌজদারী আদালতে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে বিচারক সাক্ষ্যির জবানবন্দি ও জেরা নিয়ে সাক্ষ্য প্রদানকারীর স্বাক্ষর নেন। তখন আসামির কাঠগড়ায় উপস্থিত থাকতে হয়।

(ঘ) আসামি পরীক্ষা/৩৪২: আসামি পরীক্ষার ক্ষেত্রে আসামিকে আদালতে হাজির হতে হয় এবং নির্ধারিত ফরমে আসামির স্বাক্ষর নিতে হয়।

(ঙ) রায় প্রদান: রায় প্রদানের সময় আসামিকে আদালতে হাজির থাকতে হয়। কারণ আসামির সাজা হলে সাজা পরোয়ানা মূলে আসামিকে জেলে যেতে হবে।

পরিশেষে বলা যায়, অধস্তন আদালতের উপরের কার্যক্রমে পক্ষের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক বিধায় অধস্তন আদালতের কার্যক্রম পুরোপুরি ভার্চুয়াল করা সম্ভব নয়।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।