যথাযথভাবে তালাক হয়নি জেনেও তামিমা সুলতানাকে বিয়ে করার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ক্রিকেটার নাসির হোসেনসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।
আজ সোমবার (২৪ জানুয়ারি) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের বিচারক অ্যাডিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন এ আদেশ দেন।
মামলার অপর দুই আসামি হলেন- ক্রিকেটার নাসিরের স্ত্রী তামিমা সুলতানা ও তামিমার মা সুমি আক্তার। শুনানির সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালতে বাদীপক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। অন্যদিকে আসামিপক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু।
এদিন আদালতে বাদীপক্ষের আইনজীবী ইশরাত হাসান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আর্জি জানান। অপরদিকে আসামিদের অব্যাহতি (ডিসচার্জ) চেয়ে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী নজিবুল্লাহ হিরু।
অভিযোগ গঠনের শুনানির শুরুতে ক্রিকেটার নাসিরের আইনজীবী কাজী নজিবুল্লাহ আদালতে বলেন, তামিমার সঙ্গে মামলার বাদী রাকিবের তালাক কার্যকর হয়েছে ২০১৭ সালের ২২ এপ্রিল। আর নাসির তামিমাকে বিয়ে করেন এর চার বছর পর। সুতরাং নাসিরের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ টেকে না। আর তামিমা আইন মেনে রাকিবকে যথাযথভাবে তালাক দিয়েছেন, তালাক কার্যকর হয়েছে। তালাকের নোটিশ দেওয়ার দায়িত্ব কাজী অফিসের। তামিমার মায়ের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও সঠিক নয়।
এরপর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন বাদীপক্ষের আইনজীবী ইশরাত হাসান। তিনি আদালতকে বলেন, আসামিপক্ষ থেকে ২০১৭ সালে রাকিব ও তামিমার মধ্যে তালাক কার্যকর করার কথা সঠিক নয়। তামিমা ২০১৮ সালের পাসপোর্টে স্বামীর নাম হিসেবে রাকিবের নাম উল্লেখ করেন। জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন আসামিরা।
উভয়পক্ষের আইনজীবীদের ঘণ্টাব্যাপী শুনানি শেষে বিচারক অভিযোগ গঠনের বিষয় আদেশের জন্য নতুন দিন ঠিক করেন।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর এ মামলায় নাসির, তামিমা ও সুমি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেছিলেন। সেদিন আদালত তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেছিলেন।
এর আগে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর নাসির, তামিমা ও সুমির বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আদালত সেদিন পিবিআইয়ের প্রতিবেদন আমলে নেন। এ ছাড়া মামলার তিন আসামিকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারির আদেশ দেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরার একটি রেস্তোরাঁয় নাসির ও তামিমার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। এরপর নতুন করে বিতর্ক ওঠে এই ক্রিকেটারকে ঘিরে। তামিমা তাঁর আগের স্বামীকে তালাক না দিয়ে নাসিরকে বিয়ে করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় মামলা করেন তামিমার আগের স্বামী রাকিব হাসান।
২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তাম্মির স্বামী রাকিব হাসান বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় আগের বিয়ে গোপন থাকা অবস্থায় অন্যত্র বিয়ে, অন্যের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যাওয়ায় মানহানির অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তাম্মি ও রাকিবের বিয়ে হয়। তাদের ৮ বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। তাম্মি পেশায় একজন কেবিন ক্রু। চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাম্মি ও ক্রিকেটার নাসির হোসেনের বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা রাকিবের নজরে আসে। পরে পত্র-পত্রিকায় তিনি ঘটনার বিষয়ে জানতে পারেন।
এতে আরও বলা হয়, তাম্মি ও নাসিরের এমন অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্কের কারণে রাকিব ও তার শিশু কন্যা মানসিক বিপর্যস্ত। আসামিদের এমন কার্যকলাপে রাকিবের চরমভাবে মানহানি হয়েছে।
মামলাটি তদন্ত করে ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পিবিআইর পুলিশ পরিদর্শক শেখ মো. মিজানুর রহমান তিন জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। পরে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন মামলার বাদী ও তামিমার সাবেক স্বামী রাকিব হাসানের আইনজীবী ইশরাত হাসান।
শুনানি শেষে আদালত ক্রিকেটার নাসিরসহ তিন জনকে ৩১ অক্টোবর আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন। নির্ধারিত দিনে তারা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান।