বহুল আলোচিত সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলার উদাহরণ টেনে মামলার তদন্ত-বিচারে দীর্ঘসূত্রিতার দায়-দায়িত্বের বিষয়ে এবার নিজেদের দিকেই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
আজ রোববার (৬ মার্চ) ভার্চুয়াল থেকে সশরীরে আদালত শুরুর প্রথম দিনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চকে অভিনন্দন জানান। বেঞ্চে অপর দুই বিচারপতি ছিলেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম।
সেসময় ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল হাইকোর্টের আরো কয়েকটি ফৌজদারি মোশন বেঞ্চ বাড়াতে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, অনেকগুলো মোশন বেঞ্চ তো আছে।
তখন রুহুল কুদ্দুস কাজল ফৌজদারি মোশন বেঞ্চ গুলোতে বুধ ও বৃহস্পতিবার কোয়াশমেন্ট পিটিশন শুনানির দিন ধার্য থাকার বিষয়টি প্রধান বিচারপতির নজরে আনেন। সেই সাথে আসছে ভ্যাকেশনের আগের বুধ ও বৃহস্পতিবার মোশন বেঞ্চগুলোতে কোয়াশমেন্ট পিটিশন শুনানি বাদ রেখে শুধুমাত্র ফৌজদারি মোশন শুনানির ব্যাবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন।
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা আমদের সহযোগিতা করুন। আমাদের মত করে কোর্ট চালাতে দিন। একটা উদাহরণ দেই… সগিরা মোর্শেদ নামের এক মহিলা ভিকারুননিসা স্কুলের সামনে খুন হলো। ২৮ বছর সে মামলা তদন্তের জন্য ছিলো! এই দায়-দায়িত্ব কি শুধুমাত্র অন্য কারোর? নাকি আমাদেরও আছে?’
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘আমি সম্প্রতি কয়েকটি বিচারিক (অধস্তন) আদালত ঘুরেছি। আমি সেখানকার জজদের জিজ্ঞেস করেছি এগুলো হচ্ছে কেন? অন্যান্য কারণের সাথে তারা আমাকে এটাও বলেছে যে, অনেক হত্যা মামলার (মার্ডার কেস) বিচার কোয়াশমেন্ট পিটিশনের ফলে হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত (স্টে) হয়ে আছে। আমরা কিছুই করতে পারছি না।’
‘‘এরপর আমি আমার অফিসকে বলেছিলাম এরকম কেস কতগুলো পেন্ডিং আছে তা জানাতে। পরবর্তীতে জানতে পেরেছি যে ২০০৪ সাল পর্যন্ত এরকম সাড়ে তিন হাজার মামলা ডিটেক্ট করা হয়েছে। যেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কেউ সন্তান হারিয়েছেন, কেউ বাবা হারিয়েছেন, কেউ আপনজন হারিয়েছেন তাদের তো বিচার পাবার অধিকার আছে। সে বিষয়টিও আমাদের দেখতে হবে।’’
মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন সংক্রান্ত মামলার প্রসঙ্গ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ডেথ রেফারেন্স মামলাগুলো শুনানির জন্য এখন মাত্র ১টি হাইকোর্ট বেঞ্চ আছে। আমি ১৪ জন বিচারপতির সাথে কথা বলেছি। তাদের অনুরোধ করেছি আসছে ভ্যাকেশনের সময় কোর্ট বসিয়ে ডেথ রেফারেন্স মামলাগুলো শুনতে। কারণ, মৃত্যুদণ্ডাদেশ পেয়ে যারা কনডেম সেলে আছে তাদের কষ্টটা আমাদের বুঝতে হবে। এমনো তো হতে পারে যে কনডেম সেলে থাকা তাদের কেউ (একুইটাল) খালাসও পেতে পারে। তাই আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে এগুলো (ডেথ রেফারেন্স মামলা) শুনার।’