লিঙ্গ সমতা ছাড়া সমতাভিত্তিক টেকসই ভবিষ্যৎ নাগালের বাহিরে থেকে যায় উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ বলেছেন, টেকসই উন্নয়নের চাবিকাঠি হল নারীর ক্ষমতায়। সে কারণেই আমি আশা করি আমাদের নারীরা টেকসই উন্নয়নের অভিযাত্রায় বৈশ্বিক মিছিলের পুরোভাগেই শামিল হবে। নেতৃত্বের দায়িত্ব গুরুদায়িত্ব নিয়ে সক্ষমতা ও সাহসের সাথে অগ্রসর হবে।
আজ মঙ্গলবার (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের নারী আইনজীবীদের উদ্যোগে আয়োজিত ‘টেকসই আগামীর জন্য আজ লিঙ্গ সমতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, মানবজাতির সদস্য ও একজন নারী হিসেবে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রাক্কালে এখানে কিছু বলতে পারা আমার জন্য অনিন্দ্য আনন্দ। বর্তমান মহামারির মধ্যেও এমন একটি তাৎপর্যময় অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সুপ্রিম কোর্টের নারী আইনজীবীদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
তিনি বলেন, প্রতিবছর ৮ই মার্চ বিশ্বব্যাপী পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী দিবস। দিনটি নারীর সমতাকে ত্বরান্বিত করার জন্য যুগান্তকারী কর্মের আহ্বান জানিয়েছিল। ইতিহাস জুড়ে নারীদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে হয়েছে, যা আমরা আজ উপভোগ করি।
আপিল বিভাগের এই বিচারক বলেন, ১৫০ বছর আগেও নারীরা ভোট দিতে পারেনি, সংসদ থেকে বাদ পরেছে, অপর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পেয়েছিল, সম্পত্তির মালিক হতে পারেনি, ন্যায্য আইনি সহায়তাপ্রাপ্ত হয়নি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পর্যন্ত ছিল না।
কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, আজ আমরা সৌভাগ্যবান, কারণ এমন একটি সময় ও জায়গায় বাস করছি যেখানে একজন নারী রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রচুর। অংশগ্রহণের সুযোগ কিন্তু সমতার নিশ্চয়তা দেয় না। তবে সবার জন্য সমতায় পৌঁছানোর আগে আমাদের এখনো কিছু করার আছে।
তিনি আরও বলেন, টেকসই উন্নয়ন ও বৃহত্তর লিঙ্গ সমতার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন এবং এই পরিস্থিতিতেও উত্তরণ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের কণ্ঠস্বর জাগ্রত রাখতে হবে। সমান অংশী হওয়ার সুযোগের পাশাপাশি নিজেদের সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে ওঠা অপহার্য।
এই বিচারপতি বলেন, আজ লিঙ্গ সমতা ছাড়া একটি টেকসই ভবিষ্যৎ এবং একটি সমতাভিত্তিক ভবিষ্যৎ নাগালের বাহিরে থেকে যায়। টেকসই উন্নয়নের চাবিকাঠি হল নারীর ক্ষমতায়। সে কারণেই আমি আশা করি আমাদের নারীরা টেকসই উন্নয়নের অভিযাত্রায় বৈশ্বিক মিছিলের পুরোভাগেই শামিল হবে। নেতৃত্বের দায়িত্ব গুরুদায়িত্ব নিয়ে সক্ষমতা ও সাহসের সাথে অগ্রসর হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি নুরুজ্জামান, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, হাইকোর্টের বিচারপতি নাইমা হায়দার, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সিনিয়র অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, বার কাউন্সিলের সদস্য সিনিয়র অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম (জেড আই) খান পান্না।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী তৌফিকা করিম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌস রূপা।