ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে সুদমুক্ত লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কথিত শরিয়াভিত্তিক পরিচালিত শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কোম্পানি নামে আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে বেশ কিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কথিত শাহ সুলতান প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানসহ তার ৪ সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আজ রোববার (১৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এর আগে শনিবার (১২ মার্চ) রাতে নরসিংদীর সদর থানাধীন ভেলানগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন- শাহ আলম (৫০), দেলোয়ার হোসেন শিকদার (৫২), কাজী মানে উল্লাহ (৪৪), সুমন মোল্লাহ (৩৩) ও আব্দুর হান্নান মোল্লাহ (৩০)।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, নরসিংদীর প্রায় ৫-৬ হাজার সাধারণ পেশাজীবী মানুষ এই প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সর্বশান্ত হয়েছেন। বেশির ভাগ মানুষ তাদের সারা জীবনের কষ্টার্জিত জমানো অর্থ এখানে বিনিয়োগ করেন। আর চক্রটি প্রায় ২শ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।
গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, ২০১০ সালে নরসিংদী সদর থানা এলাকায় শরিয়াভিত্তিক শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কোম্পানি নামে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলে। চক্রটি অতি সুকৌশলে ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সুদমুক্ত ব্যবসায় প্রলুব্ধ করে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে। চক্রের অন্যতম হোতা শাহ আলম নিজে কোম্পানীর চেয়ারম্যান হিসেবে ৪টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ২৪ জন জনবলের সমন্বয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে ও অতিরিক্ত ২০ জন পরিচালক নিয়োগ দেন তিনি। পরে নরসিংদী জেলার বিভিন্ন থানায় প্রতিষ্ঠানটি শাখা স্থাপন করে।
খন্দকার আল মঈন জানান, মাঠপর্যায়ে গ্রাহক ও অর্থ সংগ্রহের জন্য তাদের প্রায় ৩ শতাধিক কর্মী ছিল, যাদেরকে কোনো ধরনের বেতন দেওয়া হতো না। তাদেরকে গ্রাহকদের বিনিয়োগের মাধ্যমে এককালীন ১০ শতাংশ ও বছরান্তে ৬ শতাংশ অর্থ প্রাপ্তির প্রলোভন দেখানো হতো। আর বিনিয়োগকারীদেরকে বার্ষিক ১২-১৬ শতাংশ মুনাফার প্রলোভন দেখাতেন।
এছাড়া তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে উচ্চ মুনাফায় মাসিকভিত্তিতে ডিপিএসের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করত বলে জানায়। তারা এখন পর্যন্ত প্রায় ২শ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে বলে স্বীকার করেছেন। তবে, গ্রাহকদের তথ্যমতে টাকার পরিমান আরও বেশি হতে পারে বলেও জানান তিনি।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, করোনার ক্রান্তিলগ্নে যখন মানুষের টাকার প্রয়োজন হয়, তখন টাকা উত্তোলন আবেদন করে মানুষজন। তখনই তারা করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন অযুহাতে গচ্ছিত টাকা ফেরত না দিতে গড়িমসি শুরু করেন। গ্রাহকদের টাকা দিয়ে তারা নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় ৫-৬ একর জমি নিজেদের নামে ক্রয় করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির নামে নরসিংদীসহ বিভিন্ন স্থানে ৭-৮ একর জমি রয়েছে।
একপর্যায়ে গ্রাহকরা টাকা ফেরতের জন্য ক্রমাগত চাপ দিলে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা প্রতিষ্ঠানটিতে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।