বলা হয়ে থাকে, বই পড়লে মুক্তি মেলে। কথাটা যেন নতুনভাবে সত্য হয়ে ওঠে যখন বই পড়লে অপরাধীর শাস্তি কমায় কোন কারাগার, এমনকি মিলতে পারে স্থায়ী মুক্তিও। হ্যাঁ, অদ্ভুত শোনালেও এটাই সম্ভব দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় দেশ ব্রাজিলের কিছু কারাগারে, সেখানে বই পড়লেই শাস্তির মেয়াদ কমানোর সুযোগ পেয়ে যান কারাগারে বন্দি অপরাধীরা!
দক্ষিণ ব্রাজিলের ‘কাসা দে কাস্তোদিয়া দে পিরাকোয়ারা’ কারাগারসহ আরও তিনটি ফেডারাল প্রিজনের বন্দিরা বই পড়লেই কমে যায় শাস্তি। দেশটির সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধীদের অধিকাংশই এ কারাগারগুলোতে আটক আছে। কাসা দে কাস্তোদিয়া দে পিরাকোয়ারা কারাগারে মোট ৭ হাজার বন্দি আছে যারা খুন, ধর্ষণ ও ডাকাতির জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেল জীবন কাটাচ্ছে।
বছরে একজন বন্দি মোট বারোটি বই পড়তে পারেন সেখানে। অর্থাৎ প্রতিমাসে একটি করে বই পড়া যাবে। বই প্রতি ৪ দিন থেকে সর্বাধিক ৪৮ দিন কমে বন্দির শাস্তির মেয়াদ।
এখানেই শেষ নয়! প্রতিটি বই পড়ার জন্য তাদের বরাদ্দ সময় এক মাস। এরমধ্যে সব বন্দি-পাঠককেই একটি করে বই-আলোচনা লিখে জমা দিতে হয়। কী থাকে তাতে? যে বইটি তারা পড়ছেন তার মূল বিষয়, প্রিয় চরিত্র ইত্যাদি নানা বিষয়ে লেখা থাকে তাতে৷ তার ভিত্তিতে চলে পরীক্ষাও। লেখায় কোনো ভুল থাকা চলবে না, পৃষ্ঠাগুলোয় মারজিন টানতে হবে এবং লেখা হতে হবে সহজপাঠ্য। বিশেষ একটি প্যানেল সিদ্ধান্ত নেন কারাবন্দিদের মধ্যে কারা এ সুযোগ পাবে।
এ কর্মসূচির একজন শিক্ষক মারিলদা ডি পাওলা সোরেস বলেন, “এ কর্মসূচিতে আমরা অল্পকিছু বই রেখেছি, যার মধ্যে রয়েছে বিদেশি ও ব্রাজিলিয়ান ক্লাসিক এবং বন্দিদের পড়তে শেখার জন্য শিশুদের বই। খুব হিংস্র বিষয়বস্তুর বই নিষিদ্ধ।”
২০১২ সালে ‘রিডেম্পশন থ্রু রিডিং’ বা ‘পড়ার মাধ্যমে মুক্তি’ নামে অভিনব এ উদ্যোগটি চালু করেছে ব্রাজিল সরকার। দেশটিতে কারাবন্দির মোট সংখ্যা বিশ্বে চতুর্থ। কারাগারের ভেতরের শোচনীয় অবস্থা নিয়ে প্রায়ই সমাআলোচনা চলে। পাশাপাশি রয়েছে ধারণ ক্ষমতার বেশি বন্দি এবং কারাগারের ভেতরে গুণ্ডা দলের দৌরাত্ম্য, মাঝে মধ্যেই যা থেকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা তৈরি হয়।
সেই অবস্থার পরিবর্তন, অপরাধ কমানো আর অপরাধের জন্য অনুশোচনা বাড়াতে মূলত এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।