মেডিয়েশনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হলে মামলার উৎসস্থল বন্ধ হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী। এজন্য প্রত্যেক বিচারককে নিজ নিজ জায়গায় মামলা নিষ্পত্তিতে মেডিয়েশন পদ্ধতি প্রয়োগের ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল মেডিয়েশন সোসাইটি (বিমস) আয়োজিত ভোলা জেলার বিচারক ও প্যানেল মেডিয়েটরদের ৪০ ঘণ্টাব্যাপী ভার্চুয়ালি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সমাপনী বক্তব্যে শনিবার (১২ মার্চ) তিনি এ আহ্বান জানান।
কোনো বিরোধকে কেন্দ্র করে একটি মামলা দায়ের হলে সেখানে থেকে আরো ৩/৪টি মামলার সৃষ্টি হয় উল্লেখ করে বিচারপতি ইমান আলী বলেন, অধস্তন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা হয়। তারপর আপিল বিভাগ আছে। রিভিউ হয়। আদালত অবমাননার মামলা হয়। এভাবে মামলাজট বেড়ে যায়। কিন্তু শুরুতেই কোনো মামলা মেডিয়েশনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হলে মামলার উৎসস্থল বন্ধ হয়ে যায়। তাই প্রত্যেক বিচারককে নিজ নিজ জায়গায় মামলা নিষ্পত্তিতে মেডিয়েশন পদ্ধতি প্রয়োগের ওপর জোর দিতে হবে।
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ এই বিচারক বলেন, আমরা প্রায়ই বলে থাকি বিচার বিভাগে ৩৬ লাখ মামলাজট আছে। কিন্তু আমি মনে করি এটা তথ্যগত ভুল। কারণ প্রতিদিন যদি সারাদেশে ২০ হাজার মামলা দায়ের হয়, তার মধ্যে ১০ হাজার মামলা নিষ্পত্তি হয়। আর ১০ হাজার মামলা থেকে যায়। এভাবে প্রতিদিন মামলাজট বেড়ে চলছে। তবে মামলা নিষ্পত্তিতে মেডিয়েশন পদ্ধতি প্রয়োগ করলে মামলাজট কমানোর ক্ষেত্রে আমরা সুফল পেতে পারি। মামলাজট কমলে জনগণের হয়রানি কমবে, সমাজে শান্তি আসবে।
সিঙ্গাপুরের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরের প্রধান বিচারপতি এক সেমিনারে বলেছিলেন, মেডিয়েশনের মাধ্যমে তারা ৭০ শতাংশ মামলা নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হয়েছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ মামলাজট নিরসনে মেডিয়েশন পদ্ধতি প্রয়োগ করছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। মেডিয়েশনের বেনিফিটগুলো মানুষকে বোঝাতে হবে। বিচারকদেরকে এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
বিমসের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এস এন গোস্বামী বলেন, মেডিয়েশন বোধশক্তিকে জাগ্রত করে। পৃথিবীর এমন কোনো বিরোধ নেই যা মেডিয়েশনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা সম্ভব নয়। ৪০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ থেকে মেডিয়েশন বিষয়ে অর্জিত জ্ঞান নিজ নিজ আদালতে প্রয়োগ করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
অ্যাক্রিডিটেড মেডিয়েটর পংকজ কুমার কুণ্ডুর সঞ্চালনায় ৪০ ঘণ্টাব্যাপী কর্মশালায় দেশের ও আন্তর্জাতিক মেডিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য রাখেন। ভোলা জেলার ১৯ জন বিচারক ও ২০ জন প্যানেল মেডিয়েটর প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।