আইনের বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণেই নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা চলছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এসময় সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও একটা গোষ্ঠী জোটবদ্ধ হয়ে বাজারে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করছে বলেও মন্তব্য করেছেন আদালত।
হাইকোর্ট বলেছেন, রোজার সময়ে আসলেই মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটে। কারণ আইনের বাস্তবিক প্রয়োগ নেই। এজন্যে সরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সক্রিয় করতে হবে।
দেশের বাজারে খোলা এবং বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং সেল গঠন এবং নীতিমালা তৈরির নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে দায়ের করা রিটের শুনানিতে আজ সোমবার (১৪ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের বেঞ্চ এসব কথা বলেন।
আদালতে রিটকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ মহিদুল কবির। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনির হোসেন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা।
শুনানিতে যা হল
শুনানির এক পর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, যারা দাম বাড়ানোর সিন্ডিকেট জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার আইনে আপনাদের (সরকারকে) ক্ষমতা দেওয়া আছে।
এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত করা হচ্ছে। সরকার বসে নেই। অ্যাকশন নিচ্ছে।
আদালত বলেন, ইনকোয়ারি করে বসে থাকলে চলবে না, অ্যাকশন নিতে হবে। আর এটা কীভাবে করবেন সেটা আইনেই বলা আছে। সব কিছুই আছে (আইন, বিধি সংগঠন) কিন্তু প্রয়োগ নেই।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানিতে বলেন, গতকালকেও মন্ত্রণালয় সয়াবিন তেলের উৎপাদনে ভ্যাট প্রত্যাহারের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছে।
তখন আদালত বলেন, আপনি আমাদের দেখান যে জোটবদ্ধের বিরুদ্ধে আপনার কী করেছেন। আপনারা কী স্টেপ নিয়েছেন দেখান আমাদের।
তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ভোক্তা অধিকারের হটলাইন আছে অভিযোগ দেওয়ার জন্য।
আদালত বলেন, অনুসন্ধান করার জন্য ভোক্তা অধিকার আইনে বলা আছে, কিন্তু কীভাবে এটা বাস্তবায়ন হবে সেটি দেখা যাচ্ছে না।
এরপর আদালত এ বিষয়ে করা রিট আবেদনে আরও পণ্যের নাম যুক্ত করে নিয়ে আসতে বলেন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে শুনানি ও আদেশের জন্যে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) দিন ঠিক করেন।
সয়াবিন তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রিট
সয়াবিন তেলের দাম নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা চেয়ে ৬ মার্চ হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনির হোসেন, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মহিদুল কবীর ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ উল্লাহ।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে রিটটি করা হয়। আদালতে সে রিটের বিষয়ে শুনানি হয়। শুধুমাত্র সয়াবিন তেলের বিষয় নিয়ে রিটটি করা হলেও পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ও রিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করা হয় সয়াবিনের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের নিষ্ক্রিয়তাকে।
রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট আটজনকে বিবাদী করা হয়।
এর আগে ৩ মার্চ দেশের বাজারে খোলা এবং বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার ঘটনাটি উচ্চ আদালতের নজরে আনা হয়। এরপর এ বিষয়ে শুনানির জন্য রোববার দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে যথাযথ একটি আবেদন করার পরামর্শ দেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ।
সবশেষ গত মাসে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আট টাকা বাড়ায় সরকার। এতে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম হয় ১৬৮ টাকা। তবে দেশের বাজারে এর থেকে বেশি দামে তেল বিক্রি হতে দেখা যায়।