জার্মানিতে রপ্তানি পণ্যের সাপ্লাই চেইনের মানবাধিকার পরিস্থিতি যাচাই করা হবে এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার।
বাংলাদেশ ও জার্মানির কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ-জার্মান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিজিসিসিআই) গত রোববার (১৩ মার্চ) এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
জার্মানিতে নতুন একটি আইন হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘নতুন আইন সাপ্লাই চেইনে মানবাধিকার পরিস্থিতি যাচাই করার কথা বলা আছে। ২০২৩ সাল থেকে আইনটি কার্যকর হবে।’
নতুন আইনে জার্মানির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব ব্যবসায়িক কার্যক্রম এবং সাপ্লাই চেইনে যেন মানবাধিকার লঙ্ঘন না করা হয় তা নিশ্চিত করবে।
এতে বাংলাদেশি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে উল্লেখ করে এ জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রাষ্ট্রদূত ট্র্যোস্টার।
তিনি বলেন, ‘জার্মানিতে পণ্য সরবরাহ করে এমন বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের এখন এই সাপ্লাই চেইন আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নিজেদের প্রস্তুত করার মতো বিশাল দায়িত্ব রয়েছে।’
২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা পাওয়ার পর জিএসপি সুবিধা শেষ হয়ে গেলে রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে, সে সব সম্পর্কেও তিনি কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘তখন ইইউ আরেকটি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা জিএসপি প্লাস অফার করবে। কিন্তু এটি শ্রম অধিকার, সুশাসন, কর্মপরিবেশ, মানবাধিকার ইত্যাদি শর্ত মেনে দেওয়া হয়।’
‘এ সুবিধা পেতে আপনাকে নিখুঁত হতে হবে না, তবে কমপ্লায়েন্সের শর্তগুলো নিশ্চিত করতে হবে। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশের পক্ষে এ (জিএসপি প্লাসের জন্য) যোগ্যতা অর্জনের জন্য ভালো সুযোগ আছে,’ যোগ করেন তিনি।
জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশ অবকাঠামোগত দিক দিয়ে অনেক এগিয়েছে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করেছে। এটি দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করার নতুন সুযোগ তৈরি করবে।’
বাংলাদেশ-জার্মানির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং জার্মানি বাংলাদেশ থেকে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করে। এসব পণ্যের বেশিরভাগই টেক্সটাইল। যুক্তরাষ্ট্রের পর জার্মানিই বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি বাজার।
জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশকে রপ্তানির নতুন নতুন সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা জানান, আগামী ৩ বছরে জার্মানির সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। তবে এজন্য উভয় পক্ষের সহযোগিতা আরও জোরদার হতে হবে।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জার্মানি নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পরিবেশবান্ধব শিল্পে একটি শীর্ষস্থানীয় দেশ এবং এ ক্ষেত্রে তাদের উচিত বাংলাদেশকে সাহায্য করা। বাংলাদেশের বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনে অবদান মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ হলেও, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান শিকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন মানে বাজারে প্রবেশাধিকার এবং রেয়াতযোগ্য ঋণ কমে যাওয়া। তাই উন্নত দেশগুলোর উচিত সাশ্রয়ী মূল্যের সবুজ প্রযুক্তি দিয়ে আমাদের সাহায্য করা।’
অনুষ্ঠানে ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুক্তাদির বলেন, ‘বাংলাদেশে ওষুধ খাতে দক্ষতা হস্তান্তরে জার্মান প্রকৌশলীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।’
তিনি জানান, সিঙ্গাপুর বা ভারত থেকে খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি করতে ইনসেপটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। বাংলাদেশে জার্মান কোম্পানিগুলোর আউটলেট থাকলে অনেক সুবিধা হবে। এ জন্য তিনি জার্মান দূতাবাসের সহযোগিতা কামনা করেন।
জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে জানান, তিনি জার্মান গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিএমডব্লিউ এবং মার্সিডিজের সঙ্গে কথা বলছেন। তারা বাংলাদেশে অ্যাসেম্বলিং প্ল্যান্ট স্থাপন করতে আগ্রহী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (পশ্চিম ইউরোপ ও ইইউ) ফাইয়াজ মুরশিদ কাজী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বার্তা পড়ে শোনান অনুষ্ঠানে।
বার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশ-জার্মানি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কৌশলগত গভীরতায় পৌঁছেছে। এতে বাংলাদেশি কর্মীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি এবং জার্মানিতে নিয়োগের জন্য জার্মানির সহায়তা কামনা করা হয়।