সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা) যুক্তরাষ্ট্রে ৩ তলা একটি বাড়ি কিনেছেন বলে তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রও সংস্থাটির হাতে এসেছে বলে জানা গেছে।
অবৈধ সম্পদ অর্জন করে আমেরিকায় হুন্ডির মাধ্যমে পাচারের অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ও তার ভাই অনন্ত কুমার সিনহার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুদক। তবে মামলা এখনো অনুমোদন হয়নি। দুদক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, অর্থপাচারের অভিযোগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এস কে সিনহার সম্পদের তথ্য চেয়ে চিঠি দেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান। এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রে এস কে সিনহার তিনতলা বাড়ির রেকর্ডপত্র হাতে আসে দুদকের।
এ বিষয়ে তদারককারী কর্মকর্তা ও দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বলেন, এস কে সিনহার বিষয়ে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। যতটুকু জানি, মামলার সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা হয়েছে। তবে মামলার অনুমোদন এখনো হয়নি।
দুদক সূত্রে যা জানা গেছে
এস কে সিনহার ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহা আমেরিকায় একজন চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। তিনি দেশটির একটি ব্যাংক থেকে ৩০ বছরের জন্য ১ লাখ ৮ হাজার ৭৫০ ডলার ঋণ নিয়ে ১ লাখ ৪৫ হাজার ডলার দিয়ে একটি বাড়ি কেনেন। ২০১৮ সালের ১২ জুন ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার নগদ অর্থ দিয়ে আরেকটি বাড়ি কেনেন তিনি।
অনুসন্ধানের প্রতিবেদন সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল থেকে ২০ জুন পর্যন্ত নিউজার্সির প্যাটারসনে অবস্থিত ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংকে অনন্ত কুমার সিনহার অ্যাকাউন্টে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫৮ ডলার জমা হয়। এছাড়া একই অ্যাকাউন্টে পৃথক উৎস থেকে ওই বছরের ৫ মার্চ থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ৬০ হাজার ১০ ডলার জমা হয়। এসব ডলার ইন্দোনেশিয়া ও কানাডার রয় গ্রুপের কাছ থেকে পাওয়া, যা প্রকৃতপক্ষে একটি সেল কোম্পানি।
অনুসন্ধানের প্রতিবেদনে জানানো হয়, অনন্ত কুমার সিনহা বড় ভাই সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে নিয়ে ওই সময় ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংকে যান। তখন তিনি (এস কে সিনহা) ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানান, আমেরিকার প্যাটারসন এলাকায় বাড়ি কেনার জন্য বন্ধুর কাছ থেকে তিনি ফান্ড পেয়েছেন।
অনুসন্ধান প্রতিবেদনের দাবি, এস কে সিনহা প্রধান বিচারপতি থাকাকালে বিভিন্নভাবে অবৈধ অর্থ অর্জন করে তা হুন্ডিসহ বিভিন্ন কায়দায় যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করে তার ছোট ভাইয়ের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেন। এসব অর্থ দিয়ে ১৭৯ জ্যাপার স্ট্রিট, প্যাটারসন নিউ জার্সি ০৭৫২২-তে ২০১৮ সালের ১২ জুন ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার খরচ করে একটি বাড়ি কেনেন। সুতরাং বাড়িটি পরোক্ষভাবে সুরেন্দ্র কুমার সিনহারই।
এতে আরও দাবি করা হয়, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায় এস কে সিনহা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে ভোগ দখলে রেখে এবং অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান গোপন করে ২ লাখ ৮০ হাজার ডলার পাচার করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪ (২), (৩) ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় দুদক তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছে বলে জানা গেছে।
দুর্নীতির আরও অভিযোগ
এর আগে ঋণ জালিয়াতি ও অর্থপাচারের অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে যথাক্রমে চার বছর এবং সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
এছাড়া অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৩ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন আদালত।
গত ২৭ জানুয়ারি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। এ দিন দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন এ দিন ধার্য করেন।
গত বছরের ১০ অক্টোবর প্লট জালিয়াতির অভিযোগে দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি করেন। মামলায় তার বিরুদ্ধে নিজের ভাই ও আত্মীয়ের নামে ৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা সম্পদ অর্জন করে তা স্থানান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, এস কে সিনহা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে উত্তরা আবাসিক এলাকায় নিজের নামে একটি প্লট বরাদ্দ নেন। পরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহার নামেও রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে তিন কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ করান। এর পর তিনি প্রভাব খাটিয়ে তিন কাঠার প্লটটি পাঁচ কাঠায় উন্নীত করান। এক পর্যায়ে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে পূর্বাচলের প্লটটিকে উত্তরার চার নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর সড়কে (বাড়ি নম্বর ১/এ) স্থানান্তর করিয়ে রাজউকের অনুমোদন করান।