সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ফলাফল নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সদস্য ও সাবেক নেতারা মিলে তার নিষ্পত্তি করবেন বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।
আজ বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) জাতীয় সংসদে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের এক বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সরকারের অঙ্গুলি হেলনে চলে না। সমিতির নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমিতির জ্যেষ্ঠ সদস্য ও সাবেক নেতারা মিলে নিস্পত্তি করবেন।”
বুধবার আইনজীবী সমিতির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্তই হয়েছে বলে সংসদকে জানান আইনমন্ত্রী।
এর আগে বিএনপির এমপি হারুনুর রশীদ বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হয়েছে, দুই সপ্তাহেও ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। ৫০ বছরের ইতিহাসে এটা নজিরবিহীন ঘটনা। এটা হতে পারে না। এটা বিরাট লজ্জার।”
পরে হারুনের বক্তব্যের জবাব দিতে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট গণনা নিয়ে সদস্য ও প্রার্থীদের আপত্তি আছে। এ বিষয়ে কী হবে তা সমিতি ঠিক করবে। গতকাল তারা সভা করেছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, সমিতির জ্যেষ্ঠ সদস্য এবং সাবেক সভাপতি-সম্পাদকেরা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা কীভাবে নিস্পত্তি করবেন। এটা সরকারের ঘাড়ে চাপানো ঠিক হয়নি।”
জানা গেছে, সমিতির নিয়ম অনুযায়ী, বর্তমান কমিটির মেয়াদ বৃহস্পতিবারই (আজ) শেষ হচ্ছে। নতুন কমিটি ১ এপ্রিল দায়িত্ব নেওয়ার কথা।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ফল ঘোষণায় ত্রিমুখী জটিলতা
ত্রিমুখী জটিলতার কারণে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভোটগ্রহণের ১৫ দিন পার হলেও নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল এখনো জানা যায়নি।
প্রথমত, সম্পাদক পদ নিয়ে সরকারপন্থীদের (সাদা প্যানেল) ভোট পুন:গণনার দাবি। দ্বিতীয়ত, তাদের এই দাবির কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহবায়কের পদত্যাগ। তৃতীয়ত, সরকারপন্থীদের দাবি অনুযায়ী সমস্যা সমাধানে নতুন আহ্বায়ককে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের আপত্তি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের জন্য এমন পরিস্থিতিকে নজিরবিহীন ও বিব্রতকর আখ্যা দিয়ে জ্যেষ্ঠ আইনবিদেরা বলছেন, এ সমস্যার দ্রুত সুরাহা হওয়া উচিৎ।
সাদা প্যানেল সমর্থিত আইনজীবীরা সম্পাদক পদের ভোটে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট পুন:গননার দাবিতে এখনো অনড় রয়েছেন। ভোটের পর প্রায় প্রতিটি কর্মদিবসে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সরকারপন্থী আইনজীবীরা অবস্থান ও সমাবেশ করছেন।
অন্যদিকে নীল প্যানেলের আইনজীবীরা বলছেন, ভোটে তাদের সম্পাদক প্রার্থী এগিয়ে আছেন। পুনরায় ভোট গণনায় কোনো বিধান নেই এবং এর প্রয়োজনও নেই।
উল্লেখ্য, গত ১৫ ও ১৬ মার্চ উৎসবমুখর পরিবেশে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সংগঠন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২২-২০২৩ মেয়াদের ভোটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। সমিতির অডিটোরিয়ামে একযোগে ৫২টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
এবারের নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৮ হাজার ৬২৩ জন। তবে দুইদিন ব্যাপী নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ৫ হাজার ৯৯১ জন আইনজীবী।
প্রতিবছরের মতো এবারও সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির মোট ১৪টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে সম্পাদকীয় ৭টি ও সদস্য পদ রয়েছে ৭টি। এবারের নির্বাচনে ১৪টি পদের বিপরীতে ৩৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।সিনিয়র আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের নির্বাচনী সাব-কমিটি (নির্বাচন কমিশন) নির্বাচন পরিচালনা করেন।
কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতি, সহ-সভাপতির দুটি এবং সদস্যের তিনটি পদসহ মোট ছয়টি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত (সাদা প্যানেল) প্রার্থীরা ভোটের অনানুষ্ঠানিক যোগফলে এগিয়ে ছিলেন। আর সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, সহ-সম্পাদকের দুটি এবং সদস্যের চারটি পদসহ মোট আটটি পদে এগিয়ে ছিলেন বিএনপি সমর্থিত (নীল প্যানেল) প্রার্থীরা।