সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা
সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা

বিচারপতি সিনহাকে দেশে ফেরাতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে দুদক

চার বছর আগে দেশ ছেড়ে যাওয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহাকে দেশে ফেরাতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মাহবুব হোসেন।

‘অবৈধভাবে’ অর্থ উপার্জন করে বিদেশে ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহার কাছে তা ‘পাচার করে’ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির জ্যাপার স্ট্রিটের তিনতলা একটি বাড়ি কেনার অভিযোগে এস কে সিনহা ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মামলা করার পর দুদক সচিব একথা বলেন।

দুদকের যে আইন রয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তা সেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন জানিয়ে দুদক সচিব বলেন, ‘দুদকের যে মানি লন্ডারিং আইনের ধারা রয়েছে সেই ধারা মোতাবেক অনুসন্ধান কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। সেখান থেকে প্রাথমিকভাবে অর্থ পাচার এবং মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অভিযোগে প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় কমিশনের সিদ্ধান্ত ক্রমে দুদক আজকে মানি লন্ডারিং আইনে মামলাটি করেছে।’

এসকে সিনহাকে দেশে ফেরাতে দুদক চেষ্টা করবে কিনা জানতে চাইলে দুদক সচিব বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিছু করতে পারে না। দুদক আইন মোতাবেক যে ক্ষমতা বা তফসিলে আইনের যে ধারা রয়েছে সেভাবেই কাজ করবে।’

দুদক সচিব বলেন, ‘তাকে (সিনহা) ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের যে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে যে আইনী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তিনি তাই করবেন। আইনের বিধান অনুসারেই তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। তদন্তকারী কর্মকর্তা আইনের যে ক্ষমতা তা প্রয়োগ করবেন।’

দুদক সচিব জানান, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে (সংশোধিত ২০১৫) অপরাধ প্রমাণ হলে সবোর্চ্চ ১২ বছরের সাজা হতে পারে। অর্থ পাচারের বিষয়ে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে এসকে সিনহার সম্পদের তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠায় দুদক। এরইমধ্যে সেসব চিঠির প্রেক্ষিতে সিনহার বাড়ি কেনার রেকর্ডপত্র দুদক কর্মকর্তার হাতে এসে পৌঁছেছে।

দুদক সূত্রে যা জানা গেছে

দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিদেশে বাড়ি কেনার জন্য সাবেক এই প্রধান বিচারপতির ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহার মাধ্যমে বাড়ি কেনার অর্থ বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন। এই সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রাদির সত্যতা মিলেছে।

২০১৮ সালের ১২ জুন দুই লাখ ৮০ হাজার ডলারে (৮৬ টাকা ডলার হিসেবে বাংলাদেশি টাকায় যা ২ কোটি ৪০ লাখ ৮০ হাজার) সিনহার জন্য তিনতলা একটি বাড়ি কিনেন তার ভাই অনন্ত কুমার।

এই বাড়িটি কেনার আগে ৩০ বছরের কিস্তিতে আমেরিকার সরকারের কাছ থেকে অনন্ত নিজের জন্য এক লাখ ৮০ হাজার ডলার ব্যাংক ঋণ নিয়ে একটি বাড়ি কিনেছিলেন। পেশায় চিকিৎসক অনন্ত প্রথম বাড়িটি ৩০ বছরের কিস্তিতে কিনলেও নিজের ভাইয়ের জন্য বাড়ি কিনেছেন নগদ টাকায়।

অনুসন্ধান প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালে এসকে সিনহার ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহা নিউজার্সির প্যাটারসনে অবস্থিত ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংকের একটি হিসাবে ৫ মার্চ থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ৬০ হাজার ডলার জমা হয়। ওই একই হিসাবে অন্য একটি উৎস থেকে একই বছরের ১১ এপ্রিল থেকে ২০ জুন পর্যন্ত এক লাখ ৯৬ হাজার ৪৫৮ ডলার জমা হয়।

দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত সূত্রে জানা যায়, সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বাড়ি কেনার বা বিদেশে অর্থ পাচারে বৈধ কোনো উৎসের সন্ধান পায়নি সংস্থাটি। দুদক সংশ্লিষ্ট সূত্র মনে করে এসকে সিনহা বিভিন্ন সময়ে ঘুষ হিসেবে যেসব টাকা গ্রহণ করেছেন তা বিদেশে পাচার করেছেন। দুদক তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনবে সংস্থাটি।

দুর্নীতির আরও অভিযোগ

গত বছরের ৭ অক্টোবর ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজউকের প্লট বরাদ্দ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এসকে সিনহার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। এসকে সিনহা তার নিজ নামে রাজউকের উত্তরা প্রকল্পে একটি প্লট বরাদ্দ পান।

পরবর্তীতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে ও প্রতারণার মাধ্যমে তার ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পে তিন কাঠার আরও প্লটের জন্য আবেদন করেন।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভাইয়ের নামে আবেদন করা ওই তিনকাঠার প্লট বরাদ্দ নেন। পরে তিন কাঠার প্লটটিকে আবারও প্রভাব খাটিয়ে পাঁচ কাঠার প্লটে রূপান্তর করেন।

এছাড়া সাবেক ফারমার্স ব্যাংক বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক থেকে চার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি ও অর্থপাচারের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে চার বছর এবং সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।