আদালতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে যৌতুকের মামলা করায় বাদীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ। একইসঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বলেছেন বিচারক।
কক্সবাজারের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
আদেশে মামলার বাদী লতিফা বেগমের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে টেকনাফ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের এএসআই আবু তাহেরের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বলেছেন বিচারক। এ সময় আসামি রায়হানকে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
আদেশের কপি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ পাঠানো হয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
আসামিপক্ষ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, লতিফা বেগম একজন প্রতারক নারী। ইতোপূর্বে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিচয়ে ছেনুয়ারা বেগম নাম ধারণ করে রায়হানকে স্বামী উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে যৌতুক দাবির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। পরে তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মামলা খারিজ করা হয়।
এরপর একই বাদী বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয়ে লতিফা বেগম নামে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। অভিযোগ শুনানির পর্যায়ে বিচারকের কাছে আসামিপক্ষ ঘটনার বিস্তারিত উপস্থাপন করে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী সংশ্লিষ্ট নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পের কর্তৃপক্ষ বরাবর অত্র বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন প্রদানের জন্য আদেশ প্রদান করলে আসামির পরিচয় গোপন বিষয়ে সত্যতা পান মর্মে উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্প ইনচার্জ।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, মামলার বাদী লতিফা বেগম রোহিঙ্গা পরিচয়ে ছেনুয়ারা বেগম নাম ধারণ করে সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে আসছে।
বাদীর নিয়োজিত আইনজীবী হারুন অর রশিদ স্বীকার করে জানায়, লতিফা বেগম মামলার বাদী ছেনুয়ারা বেগম একই ব্যক্তি। তিনি দুটি মামলায় ভিন্ন ভিন্ন নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে সবাইকে ধোঁকা দিয়েছেন।
আদালত সূত্রে আরও জানা যায়, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বাদীকে ব্যাখ্যা প্রদান করার নির্দেশ দিলে বাদী লতিফা বেগম তার জন্মসনদ ও তার মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি দাখিল করেন।
দলিলদ্বয় পর্যালোচনায় বাদী লতিফা বেগমকে বাংলাদেশি নাগরিক মর্মে আপাতঃদৃষ্টে প্রতীয়মান হয়। বাংলাদেশি নাগরিক সম্পর্কিত লতিফা বেগম নামীয় কাগজপত্র থাকার পরও কিংবা লতিফা বেগম বাংলাদেশি নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও ছেনুয়ারা বেগম নাম ধারণ করে রোহিঙ্গা পরিচয়ে শরণার্থী ক্যাম্প থেকে সব সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেন।
এরপরও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদনে বাদী লতিফা বেগমকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি এনজিও সংস্থার ভলান্টিয়ার হিসেবে চাকরিরত মর্মে উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তে বাদীর প্রকৃত পরিচয় উদঘাটনে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় এবং বাদীর রোহিঙ্গা পরিচয় উদঘাটন না করে ভিন্নরূপ তদন্ত করায় তার বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবগতির জন্য আদালত কর্তৃক আদেশের কপি পাঠানো হয়।