বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: জয়দীপ্তা দেব চৌধুরী। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের লোগো।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: জয়দীপ্তা দেব চৌধুরী। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের লোগো।

ই-অরেঞ্জের অর্থ পাচারের ঘটনা তদন্তের নির্দেশ

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের কাছে আটকে থাকা গ্রাহকের টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে কি না সেটি খুঁজে দেখতে একটি কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওই কমিটিকে তদন্ত করে আগামী চার মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ফাইন্যান্স ইন্টেলিজেন্সসহ সংশ্লিষ্টদের এ আদেশ প্রতিপালন করতে বলা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।

রুলে গ্রাহকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের সাথে সম্পৃক্ত বনানী থানার সাময়িক বরখাস্ত পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা, সত্ত্বাধিকারী সোনিয়া মেহজাবিন ও বীথি আক্তারসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে গ্রাহক ঠকানো এবং অর্থপাচারের অভিযোগে আইনি ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও নিস্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সোহেল রানা, সত্ত্বাধিকারী সোনিয়া মেহজাবিন ও বীথি আক্তারসহ অন্যান্যদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করে ক্ষতি অনুপাতে আবেদনকারীসহ অন্যান্য প্রতারিত গ্রাহকদের মাঝে সে টাকা বন্টন বা বিতরণের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন আদালত।

বাণিজ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)‘র প্রধান, বনানী থানার সাময়িক বরখাস্ত পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা, সত্ত্বাধিকারী সোনিয়া মেহজাবিন ও বীথি আক্তারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে আবেদেনর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম, আইনজীবী সাবরিনা জেরিন ও এম.আব্দুল কাইয়ূম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।

পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের রিট

এর আগে ৫৪৭ গ্রাহকের আটকে থাকা ৭৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ফেরত চেয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের পক্ষে ৬ গ্রাহক এ রিট দায়ের করেন। রিট আবেদনে গ্রাহকদের পক্ষে প্রতিনিধি ছিলেন- মোহাম্মদ আফজাল হোসাইন, আরাফাত আলী, তারেকুল আলম, শাকিবুল আলাম সোহাগ, রানা খান ও হাবিবুল্লাহ জাহিদ।

জানা গেছে, ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে গ্রাহকদের টাকা নিয়ে সময় মতো পণ্য সরবরাহ না করার অভিযোগ ওঠে। প্রতিষ্ঠার মাত্র দুই বছরের মধ্যে গ্রাহক আকর্ষণে বিভিন্ন অনৈতিক অফার, ডিসকাউন্টের নামে তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয় ই-অরেঞ্জ। বিভিন্ন পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, কোম্পানিটি বিপুল অর্থ এরই মধ্যে বিদেশে পাচারও করেছে।

গ্রাহকেরা অনেক চেষ্টা করেও পাওনা টাকা ফেরত না পেয়ে আইনের দ্বারস্থ হন। এ অবস্থায় ই-অরেঞ্জের এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে তদন্তসহ গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির পাঁচ শতাধিক গ্রাহক এ রিট আবেদন করেন। রিটে ই-অরেঞ্জের অর্থের উৎস অনুসন্ধানসহ গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়।