সিরাজগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের দায়ের করা যৌতুক মামলায় স্ত্রী ও শ্বশুরের প্রতি সমন জারি করেছেন আদালত। আগামী ২৮ এপ্রিল তাদেরকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনায়েতপুর থানার আমলী আদালতের বিচারক কে এম শাহরিয়ার শহীদ বাপ্পী বুধবার (৬ এপ্রিল) নালিশী দরখাস্তকারী স্বামীর জবানবন্দি ও মামলার গুণাগুণ বিচার করে মামলাটি সরাসরি আমলে নিয়ে এ আদেশ দেন।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী নিখিল কুমার ঘোষ ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নালিশী মামলার বর্ণনায় বলা হয়, মামলার বাদী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ১ নং আসামী পেশায় প্রাইমারি স্কুল শিক্ষিকা ও যৌতুকলোভী মহিলা বটে। বাদী ও ১নং আসামীর সাথে দুইলক্ষ টাকা কাবিনমূলে মুসলিম শরিয়ত মোতাবেক বিবাহ হয়। বিবাহের পর হতেই স্বামীর নিকট আসামী হিসেবে অভিযুক্ত স্ত্রী তার স্বামীর বেতনের পুরো টাকা নিজের কাছে জমা দিতে বলে।
স্বামীর অসুস্থ মা বাবাকে ফেলে আলাদা বাসা ভাড়া নিতে প্রতিনিয়ত চাপ প্রয়োগ করে এবং যৌতুক হিসেবে পাঁচ লক্ষ টাকা তার ফিস্কড ডিপোজিট হিসেবে জমা দিতে বলে। স্বামী স্ত্রীর এইসব প্রস্তাবে অসম্মতি জানালে আট মাস আগে স্ত্রী তার বাবার বাড়ি চলে যায়।
এরপর স্বামী নিরুপয় হয়ে দুইমাস পূর্বে স্ত্রী ও শশ্বরের ঠিকানার ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর দাম্পত্য জীবন পুনরুদ্ধারে জন্য ও যৌতুকের দাবির জন্য একটা লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
পরে স্ত্রীর বাবা অর্থাৎ মামলার ২নং আসামি ১ম ঘটনার দিন ও তারিখে বাদী ও সাক্ষীদের বাড়িতে আপোষ মীমাংসার জন্য ডেকে নিয়ে বলে যে, আমার মেয়ের সুখের জন্য যৌতুক হিসেবে পাঁচ লক্ষ টাকা এফিডিয়ার করে দিতে হবে, অন্যথ্যায় বাদীর বিরুদ্ধে সে নারী নির্যাতনের মামলা করে চাকরিচ্যুত করবে।
এরপর দ্বিতীয় ঘটনার দিন ও তারিখে ১ নং আসামি স্ত্রী পুনরায় জানায় যে, তার বাবার কথামতো তার নামে পাঁচলক্ষ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হবে। অন্যথায় তার সাথে সে সংসার করবে না।
এপ্রেক্ষিতে ওই ব্যক্তি যৌতুক নিরোধ আইন-২০১৮ এর ৩ ধারায় আদালতে স্ত্রী ও শ্বশুরকে আসামি করে নালিশি মামলায় দায়ের করেন। ওই অভিযোগ আমলে নিয়ে আদালত আসামীদের প্রতি সমন ইস্যু করেন।
এ বিষয়ে বাদীপক্ষের অ্যাডভোকেট নিখিল কুমার ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, “ওকালতি জীবনে একটি ব্যতিক্রমধর্মী মামলা নিয়ে কাজ করলাম, এমন মামলা আদালত পাড়ায় খুবই বিরল ও ব্যতিক্রম।”
তিনি বলেন, যৌতুক নিরোধ আইনের অধিকাংশ মামলায় আমরা দেখে থাকি, একজন স্ত্রী তার স্বামী কিংবা স্বামীর মা-বাবা বা ভাইদের আসামী করে মামলা করে থাকে এবং যৌতুকের ৩ ধারার প্রায় ৯৯.৯৯% ভাগ মামলার বাদী একজন স্ত্রী আর আসামী তার স্বামী।
যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারা অনুযায়ী অপরাধ প্রমাণিত হলে সাজার বিষয়য়ে আইনজীবী নিখিল বলেন, ‘যদি বিবাহের কোন পক্ষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অন্য কোন পক্ষের নিকট যৌতুক দাবি করে তাহলে এই ধারায় সর্বোচ্চ পাঁচ বছর অনধিক এক বছর বা সর্বোচ্চ পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দণ্ডে দন্ডিত হবে।’
এই আইন অনুযায়ী একজন স্বামীর কাছে যদি তার স্ত্রী বা স্ত্রীর পিতা, মাতা বা ভাই কোন যৌতুক হিসেবে নিকাহনামার বাহিরে সামাজিক মর্যাদার বাহিরে কোন অর্থ বা সুবিধা দাবি করে তাহলে ভুক্তভোগী স্বামী এই ধারায় প্রতিকার পেতে পারেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তবে এ বিষয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করলে শাস্তি হবে জানিয়ে অ্যাডভোকেট নিখিল ঘোষ জানান, ‘একজন স্বামীর জন্য তার স্ত্রী বা স্ত্রীর পিতার বিরুদ্ধে যৌতুক দাবির অভিযোগ প্রমাণ করা বা বিশ্বাস করানো কঠিন ও দুরূহ ব্যাপার। এজন্য অবশ্যই দালিলিক প্রমাণ ও সত্যতার প্রয়োজন রয়েছে। অন্যথায় মিথ্যা মামলা দায়ের করার জন্য আদালত যদি বিশ্বাস করেন যে, মামলাটির ঘটনা ও জবানবন্দি মিথ্যা তাহলে মিথ্যা মামলা দায়েরের জন্য বাদীর বিরুদ্ধে শাস্তিযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন আদালত।’