বাবা মায়ের থেকে সন্তানের বড় শুভাকাঙ্ক্ষী কেউ হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। এ সময় আদালত আরও বলেছেন, ১৯ বছরের প্রাপ্ত বয়স্ক তরুণী বাবা-মা ছেড়ে কানাডা যেতে চান। তাকে আটকে রাখা যাবে না। তবে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে সেখানে যাওয়ার পর তরুণীর নিরাপত্তা কানাডা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে।
১৯ বছর বয়সী কানাডিয়ান তরুণীকে গৃহবন্দি রাখার অভিযোগের রিটের শুনানিতে আজ মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
আদালতে এদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম (জেড আই) খান পান্না ও ব্যারিস্টার সারা হোসেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. শাহীনুজ্জামান ও আয়েশা আক্তার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।
আর বাবা মার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী অজিউল্লাহ। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী আজিম উদ্দীন পাটোয়ারি। এছাড়া শুনানির সময় কানাডিয়ান হাইকমিশনের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এ সময় কানাডার একটি মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।
আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন ১৯ বছরের তরুণীকে কানাডা হাইকমিশনে হস্তান্তরের লিখিত আবেদন জানান।
এ পর্যায়ে রিটের আইনজীবী ও কানাডিয়ান সরকারের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, ওই তরুণী কানাডা গিয়ে কোথায় থাকবেন, তার পড়ালেখার খরচ কে বহন করবেন কানাডা সরকারের সাথে কথা বলে আমাদের জানান।
এ সময় তরুণীর বাবা আদালতকে জানান, মেয়ে কানাডা গেলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে আমার মেয়ের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মাননীয় বিচারপতিদের সঙ্গে একান্তে ৫ মিনিট কথা বলতে চাই।
তখন আদালত বলেন, আমরা আপনাদের কথা শুনব। মেয়ের কথা আগামীকাল আবারও শুনব। কানাডায় আপনার মেয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই আমরা আদেশ দেব। আমরা আগেই বলেছি, বাবা মায়ের থেকে সন্তানের বড় শুভাকাঙ্ক্ষী কেউ হতে পারে না।
পরে আদালত ১৯ বছরের তরুণীকে আবারও আগামীকাল হাজির করতে বলেন এবং নট টুডে বলে আদেশ দেন।
এর আগে রোববার (১০ এপ্রিল) আদালত ১৯ বছরের কানাডিয়ান ওই তরুণীর ল্যাপটপে ইন্টারনেট সংযোগ এবং তাকে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ দিতে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই তরুণী বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকবেন বলে আদেশে বলা হয়।
গত ৫ এপ্রিল রাজধানীর উত্তর মুগদায় ১০ মাস ধরে বাবা-মায়ের বাসায় গৃহবন্দি থাকা ১৯ বছরের কানাডিয়ান তরুণীকে হাজির করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। মুগদা থানার পুলিশ ও তার বাবা-মাকে তরুণীকে হাজির করতে বলা হয়। একইসঙ্গে ১৯ বছরের তরুণীর অসম্মতিতে তাকে ১০ মাস ধরে আটক রাখা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
রিটের নথি থেকে জানা যায়, ১৯ বছরের ওই তরুণীর জন্ম কানাডায়। তিনি জন্মসূত্রে কানাডার নাগরিক। কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। তার বাবা-মাও কানাডায় থাকতেন। ১০ মাস আগে তার বাবা-মা বেড়ানোর কথা বলে তাকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। এরপর ওই তরুণী কানাডায় ফিরে যেতে চাইলেও তাকে যেতে দেওয়া হয়নি।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, তরুণীর কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে তাকে তার নানী ও মা সব সময় বাসায় বন্দি করে রাখেন। এক পর্যায়ে ওই তরুণী ল্যান্ড ফোনে কানাডা সরকার ও ঢাকায় কানাডিয়ান হাই কমিশনকে তাকে জোরপূর্বক ঘরবন্দি করে রাখার কথা জানান। ওই তরুণী কানাডায় ফিরে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানান।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মুগদা থানায় কানাডিয়ান হাইকমিশন থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হয়। তারপর কানাডিয়ান হাইকমিশনের পক্ষে মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্ট, আইন ও সালিশ কেন্দ্র হাইকোর্টে রিট করে। রিটে পুলিশের আইজি, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, মুগদা থানার ওসি, ওই তরুণীর বাবা-মাকে বিবাদী করা হয়।