রংপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এর বিচারক দেবাংশু কুমার সরকারের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে তার চিকিৎসক স্ত্রীর করা মামলা গ্রহণ করেছেন আদালত। সেই সাথে অভিযোগ তদন্তে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলার বাদী চিকিৎসক হৃদিতা সরকারের জবানবন্দি গ্রহণ করে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-১-এর বিচারক মোস্তফা কামাল রোববার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে এ আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আইনজীবী রফিক হাসনাইন। তিনি বলেন, ‘শুনানির সময় বাদী হৃদিতা সরকার আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তার জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন আদালত। আমরা মামলা গ্রহণের আরজি জানালে আদালত তা মঞ্জুর করেন।’
মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন- দেবাংশু কুমার সরকার (৩২), তার বাবা সুধাংশু কুমার সরকার চয়ন (৬০), ফুফাতো ভাই নিলয় দে সরকার (২৭) ও চাচা রঞ্জন সরকার (৫০)। সবার ঠিকানা ময়মনসিংহরে হালুয়াঘাট উপজেলায়।
এর আগে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-২-এর বিচারক মো. রোকনুজ্জামানের আদালতে মামলাটি গ্রহণের আবেদন জানিয়েছিলেন আইনজীবী রফিক হাসনাইন। তবে দুই দফা সেই আবেদনের শুনানি পিছিয়ে যায়। ওই আদালতের বিচারক ছুটিতে থাকায় এমনটি হয়েছে বলে জানা গেছে।
মামলার এজাহার ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১১ মে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার হালুয়াঘাট পূর্ব বাজার এলাকার সুধাংশু কুমার সরকার চন্দনের ছেলে দেবাংশু কুমার সরকারের সঙ্গে একই উপজেলার উত্তর খয়রাকুড়ি গ্রামের নারায়ণ সরকারের মেয়ে হৃদিতা সরকারের বিয়ে হয়। ওই দিন বিয়ের আসরে বর দেবাংশু কুমার সরকার ও তার পরিবার কনেপক্ষের কাছে নগদ ৩০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করলে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। পরে স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় হিন্দু আইনে বিবাহ সম্পন্ন হয়।
কনের বাবা বিয়ের অনুষ্ঠানে ৫০ ভরি স্বর্ণালংকারসহ প্রায় ২৫ লাখ টাকার মালামাল (উপহারসামগ্রী) বরপক্ষকে দেন। বিয়ের কয়েক মাস পার না হতেই দেবাংশু কুমার সরকার নেশাগ্রস্ত হয়ে নতুন একটি প্রাইভেট কার কেনার জন্য তার স্ত্রী হৃদিতাকে ৩০ লাখ টাকা যৌতুক প্রদানের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।
কিন্তু হৃদিতা সরকার তার বাবার অক্ষমতার কথা জানালে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকে। এরই মধ্যে ঠাকুরগাঁও থেকে নেত্রকোণা হয়ে রংপুরে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন দেবাংশু। তিনি স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন, পরকীয়া ও মাদক সেবনের মতো নেতিবাচক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখেন।
স্ত্রী ও একমাত্র ছেলের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে অভিযুক্ত দেবাংশু দিন দিন অনৈতিক কাজে লিপ্ত হন। অবশেষে প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে দাবি করা যৌতুকের টাকা না পেয়ে গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করেন দেবাংশু কুমার। বিষয়টি প্রধান বিচারপতি, সচিব ও আইন মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়।
বিষয়টি জানাজানি হলে দেবাংশু ৩০ লাখ টাকা ছাড়া তার প্রথম স্ত্রী হৃদিতা সরকারের সঙ্গে সংসার না করার সিদ্ধান্ত জানান। এ নিয়ে গত ২৮ মার্চ হৃদিতা সরকার তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে রংপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে উপস্থিত হলে তার ওপর অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়।
এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে দীর্ঘ ২১ দিন চিকিৎসা শেষে গত ১৭ এপ্রিল কোতোয়ালি থানায় মামলা করতে যান হৃদিতা। পুলিশ মামলা না নিয়ে আদালতে আবেদন করার পরামর্শ দেয়।