এজলাস
এজলাস (প্রতীকী ছবি)

মামলা দায়েরের ২৪ বছর পর প্রথমবারের মতো আদালতে বাদী

রাজশাহীর কৃষক আহাদ আলীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে একটি মাদক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ মামলা দায়েরের ২৪ বছর পর প্রথমবারের মতো আদালতে হাজির হয়েছেন বাদী।

গতকাল বুধবার (১১ মে) সকালে আদালতে হাজির হন মামলার বাদী সাবেক পুলিশ কনস্টেবল আব্দুস সালাম। এরপর সকাল ১১টার দিকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২ এর বিচারক এএসএম রুহুল ইমরান মামলার শুনানি শুরু করেন।

২০০৭ সালে অবসরে যাওয়া গাবতলী বাস টার্মিনাল পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন কনস্টেবল আব্দুস সালাম আদালতকে জানান, ১৯৯৮ সালের ২৮ মার্চ টার্মিনালের ৪ নম্বর গেটে কর্তব্যরত অবস্থায় অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য পান তিনি।

আব্দুস সালাম আদালতকে বলেন, ‘তখন রাত প্রায় ৮টা ১০ মিনিট। একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি আমাকে একজন লোক (আহাদ আলী) দেখিয়ে বলেন যে, তার কালো ব্যাগে কিছু আছে। আমরা তার ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে একটি ছোট পলিথিনের প্যাকেটে ১০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করেছি।’

এদিকে মামলার নথিতে বলা হয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিধান কুমার সরকার ও শেখ আবুল কাশেম নামে দুই প্রত্যক্ষদর্শীর উপস্থিতিতে পুলিশ আহাদ আলীর ব্যাগ থেকে মাদক উদ্ধার করে।

বিধান ও কাশেম ছাড়াও ৭ জন পুলিশ সদস্য এবং সরকার নিযুক্ত একজন রাসায়নিক পরীক্ষককেও প্রসিকিউশনের সাক্ষী করা হয়। কিন্তু দুই দশকের বেশি সময় ধরে চলতে থাকা এ মামলায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কেউ সাক্ষ্য দিতে আসেননি।

১৯৯৮ সালে গাবতলী বাস কাউন্টারের শ্রমিক শেখ আবুল কাশেম গত ৮ ফেব্রুয়ারি আদালতকে বলেন, ‘সেদিন আমি গাবতলী বাস কাউন্টারে কাজে ছিলাম। পুলিশ এসে আমার নাম ঠিকানা লিখে নেয়। তারা বলেছিলেন যে তারা একটি মামলার তদন্তের জন্য আমার তথ্য নিচ্ছেন।’

সাক্ষ্যগ্রহণের পর আহাদ আলীর আইনজীবী সঞ্জীব মণ্ডল সাক্ষীদের জেরা করে জানতে চান, কেন মামলার নথিতে কোনো সাক্ষীর স্বাক্ষর ছিল না। সালাম এ বিষয়ে কিছু বলেননি। কেন তারা (পুলিশ) উল্লিখিত ড্রাগ উদ্ধারের পরে একটি জব্দ তালিকা প্রস্তুত করেনি সে প্রশ্নের সঠিক উত্তরও দিতে পারেননি তিনি।

এ ধরনের অভিযানের জন্য একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার প্রয়োজন হয়। আইনজীবী সঞ্জীব মণ্ডল অনুসন্ধান দলের নেতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, সালাম বলেন, তিনি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

আরেক জন সাক্ষী দাঙ্গা পুলিশের একজন কনস্টেবল মোরশেদ আলমও গতকাল সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি জানান, তিনি দাঙ্গা পুলিশে ছিলেন এবং তল্লাশির সময় সালামের সঙ্গে ছিলেন।

জেরার সময় সালামের আইনজীবী আদালতকে বলেন, ঘটনাস্থলে কোনো বাজেয়াপ্ত তালিকা প্রস্তুত করা হয়নি। ‘তার মক্কেলের কাছ থেকে কোনো হেরোইন উদ্ধার করা হয়নি।’

পরবর্তী শুনানির ১৪ জুন দিন ধার্য করে করে বিচারক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অভিযোগপত্রে নাম থাকা, তদন্ত কর্মকর্তাসহ বাকি সাক্ষীদের বাধ্যতামূলকভাবে আদালতে হাজির করতে বলেন।

ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে, কোনো কিছু অনুসন্ধান করার আগে, কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলের দুই বা ততোধিক সম্মানিত ব্যক্তিদের ডাকতে হবে এবং তাদের উপস্থিতে অনুসন্ধান করতে হবে এবং তাদেরকে সাক্ষী হওয়ার জন্য আহ্বান জানাতে হবে।

সাক্ষীদের উপস্থিতিতে তাদের সাক্ষর নিয়ে কর্মকর্তা বাজেয়াপ্ত করা সব জিনিসের একটি তালিকা এবং সেগুলো যে জায়গায় পাওয়া গেছে তার একটি তালিকা অবশ্যই প্রস্তুত করবেন।

শুনানি শেষে আব্দুস সালামের সঙ্গে গণমাধ্যমের কথা হয়। তিনি অবসরে যাওয়ার পর বরিশালের বানারীপাড়ায় থাকেন। তিনি জানান, তাকে আদালতে হাজির হতে হবে জানিয়ে মঙ্গলবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি ফোন আসে।

আবুল কাশেমের সাক্ষ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তথ্যদাতাকে কেন সাক্ষীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেননি জানতে চাইলে তিনি চলে যান।

পুলিশের সাক্ষী বর্তমানে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত মোর্শেদ আলম বলেন, তিনি সালামের নির্দেশে তল্লাশি চালিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, রাজশাহীর গোদাগাড়ীর কৃষক আহাদ আলী গত ২৪ বছর ধরে রাজশাহী ও ঢাকার মধ্যে এমন একটি অপরাধে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য যাতায়াত করছেন। তার দাবি, তিনি কোনো অপরাধ করেননি।

হেরোইন রাখার অভিযোগে ১৯৯৮ সালে ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে গ্রেপ্তার হয়ে তিনি পুলিশকে বারবার বলেন, জব্দকৃত মাদক তার নয়। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে পুলিশ তার মুক্তির জন্য ৫ হাজার টাকা দাবি করেছে।

সূত্র: দ্য ডেইলি স্টার