তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফের ছেলে মোয়াজ আরিফকে (৪৩) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরপর আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সাবেক স্ত্রী মাধবী আক্তার নীলার দায়ের করা মামলায় বৃহস্পতিবার গ্রেফতারের পর শুক্রবার (১৩ মে) তাকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী মিয়া এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, একটি মামলায় তার (মোয়াজের) বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। সেই পরোয়ানামূলে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
জানা গেছে, নীলার সঙ্গে অনেকদিন ধরেই তার সাবেক স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। তিনি বিভিন্ন সময়ে স্বামী-শ্বশুরের বিরুদ্ধে নির্যাতনসহ নানারকম অভিযোগ করেছেন। পরে তিনি মামলাও করেন। এ নিয়ে তিনি সংবাদ সম্মেলনও করেছেন।
সংবাদ সম্মেলন করে নির্যাতনের অভিযোগ
গত বছরের ১৬ জুলাই রাজধানীর মিরপুরের আরামবাগের নিজ বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জোরপূর্বক সন্তানকে আলাদা রাখা, শারীরিক নির্যাতন, গর্ভপাত, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ করেন মাধবী আক্তার নীলা।
এসময় তিনি বলেন, ‘শ্বশুর হাসান আরিফ আমাকে পছন্দ করে তার ছেলে মোয়াজ আরিফের সঙ্গে আমার বিয়ে দেন। শুরুর দিকে সংসার ভালোই চলছিলো। তবে ঘটনার শুরু আমার বড় মেয়ে মারিয়ামের জন্মের পর। ২০১৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মারিয়ামের জন্ম। আমার মেয়ের যখন পাঁচ মাস বয়স তখন থেকেই আমার নিঃসন্তান ননদ আমার মেয়েকে তার কাছে নিয়ে রাখতে চান। বিষয়টি স্বামী মোয়াজকে জানালে তিনি তখন আমাকে আইন ও শালিস কেন্দ্রে যেতে বলেন। তাদের পরামর্শে থানায় জিডি করি আমি।’
‘জিডির পর পুলিশ তদন্তে আসে। আমার শ্বশুর ও ননদ তখন আমার স্বামীকে এলিফ্যান্ট রোডের চেম্বারে ডেকে নিয়ে যায়। ঘরে ফিরেই আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে আমার স্বামী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, তুমি বাবার নামে জিডি করেছো। এতে বাবা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। ওই অবস্থায় আমি ঘর থেকে বাসার নিচে গ্যারেজে নেমে এসে ৯৯৯ এ ফোন করি। সেদিন পুলিশ এসে আমার স্বামী ও মারিয়ামসহ আমাকে থানায় নিয়ে যায়। সারা রাত আমরা থানায় থাকি। তখন শীতকাল হওয়ায় বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তাকে মর্ডান ও পরে গ্রীন লাইফ হসপিটালে নিয়ে যাই। শ্বশুর সেদিন বাচ্চাকে দেখতে হাসপাতালে গেলে তাকে আমি চলে যেতে বলি। আমার আচরণে শ্বশুর আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এরপর থেকেই আমাকে মারধর, খাবার না দেওয়া, বাসায় বন্দি করে রাখা, চিকিৎসা করতে না দেওয়ার ঘটনাগুলো শুরু হয়। আমার চলাফেরা নিয়ন্ত্রণের জন্য বাসার ভেতরে আটটি সিসি ক্যামেরা রাখা হয়।
‘এভাবে অত্যাচারের এক পর্যায়ে আমার পেটে লাথি মারায় ২০২০ সালের ৭ মার্চ আমার দ্বিতীয় বাচ্চাটি তিন মাসের গর্ভে থাকতেই নষ্ট হয়ে যায়।’
‘পরবর্তী সময়ে আমি যখন তৃতীয়বারের মত গর্ভধারণ করি আমার শ্বশুর তখন আমাকে তার ধানমন্ডির বাসায় থাকতে বলেন। পরদিন আমার দুটো ফোন জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর আমার গলা চেপে ধরেন আমার শ্বশুর। সেদিন আমার স্বামীও আমাকে বেশ মারধর করে। এক পর্যায়ে আমার সন্তান মারিয়ামকে রেখে আমাকে গ্যারেজে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তখন পুলিশের কাছে ৯৯৯ এ ফোন করি। কিন্তু পুলিশ জানায়, আমার স্বামী আগেই ফোন করে জানিয়েছে আমি তাকে মেরেছি। পরে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করে।’
নীলা আরও বলেন, যখন আমার তৃতীয় সন্তান গর্ভে আমাকে বাচ্চা নষ্ট করতে জোরাজুরি করেন স্বামী। আমি যেন নিজের বাড়িতে বা পুলিশের কাছে যেতে না পারি সেজন্য আমার বিরুদ্ধে আমার স্বামী হত্যা প্রচেষ্টার মামলা করেন। ওই মামলায় আমাকে কারাগারে পাঠানো হয়। আমার আইনজীবী অনেকবার চেষ্টা করেও জামিন করাতে পারেননি, কারণ আমার শ্বশুর প্রভাব খাটিয়েছিলেন।
তিবি বলেন, কারাগারেই আমার বাচ্চার জন্ম হয় গত ৬ জুন। পরদিন ৭ জুন আমার জামিন হয়। পরে কারাগার থেকে বেরিয়ে শ্বশুর বাড়িতে স্বামীর কাছে ফোন করি। কিন্তু তারা আর আমার সাথে যোগাযোগ না করে ফোন নাম্বার মোবাইলে ব্লক করে রাখে।
নীলা বলেন, বর্তমানে আমার মরিয়াম দুই বছরের শিশু। সে যতদিন বড় না হয় ততদিন পর্যন্ত যেন আমার কাছে রাখা হয়। আমি এখনো সংসার করতে চাই।
এক প্রশ্নের জবাবে শ্বশুরের বিষয়ে নীলা বলেন, আমার শ্বশুর আমার স্বামীকে সবসময় প্ররোচনা দেন।