মেহেরপুরের গাংনীতে স্থানীয় সালিশে বেআইনিভাবে আটকে রেখে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর গ্রহণ করে এক ব্যক্তিকে দেড় লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। স্থানীয় অনলাইন পত্রিকায় গত শনিবার (১৪ মে) সংবাদটি প্রকাশিত হয়।
প্রকাশিত সংবাদ সংশ্লিষ্ট আমলি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট এস, এম, শরিয়ত উল্লাহ’র নজরে এলে তিনি স্বপ্রণোদিতভাবে বিষয়টি আমলে নিয়ে গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন আগে কাজিপুর গ্রামের মজিবরের মেয়ে পরি (১৬-ছদ্মনাম) নিয়ে বাড়িতে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয় বেতবাড়িয়া গ্রামের জাফর মোল্লার ছেলে শাহাবুল মোল্লা (২৪)। তারা সম্পর্কে দুলাভাই ও শালিকা। পরে শাহাবুলের পরিবারের লোকজন বাড়িতে নিয়ে আসে। উভয় পরিবারের লোকজন ৮নং ওয়ার্ড বেতবাড়িয়া গ্রামের ইউপি সদস্য সাইদুর রহমানের বাসায় গ্রাম্য সালিশ বসাই।
এসময় দু’পক্ষের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষ ২-৩ জন আহত হয়। পরে ২নং ওয়ার্ডের কাজিপুর ইউপি সদস্য ফুলচাঁদ এসে দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতা নিয়ে আসেন। ইউপি সদস্য সাইদুর রহমান ও ফুলচাঁদের সমন্বয়ে শাহাবুল ইসলামকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। ওই সময় নগদ ৫০ হাজার টাকা ও এক মাসের মধ্যে আরো ১ লক্ষ পরিশোধ করতে হবে এমন শব্দ স্ট্যাম্পের লিখিত নেন।
এ বিষয়ে শাহাবুল ইসলাম জানান, ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাইদুর রহমানের বাড়িতে আমাকে আটকে রেখে গ্রাম্য সালিশ পরিচালনা করেন। পরে সকলের সিদ্ধান্তে আমার কাছে ১ লক্ষ ৫০হাজার টাকা জরিমানা করে গ্রাম্য সালিশের মাতব্বররা।
এ বিষয়ে ৮-নং ওয়ার্ডের (বেতবাড়িয়া) ইউপি সদস্য সাইদুর রহমান জানান, উভয় পক্ষের লোকজন নিয়ে গ্রাম্য সালিশ করা হয়েছে। সালিশ চলাকালীন সময়ে সামান্য ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। এতে কয়েকজন আহত হতে পারে। তার কাছে কোনো প্রকার জরিমানা করা হয়নি। যেহেতু ওই মেয়ের বিয়েতে একটা খরচ হবে তাই বিয়ের খরচ বাবদ ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ২ ওয়ার্ডের (কাজিপুর) ইউপি সদস্য জানান, শাহাবুল ইসলাম আমার ভাইয়ের জামাই। তাকে ভয় দেখানোর জন্য স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নগদ ৫০ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে এবং এক মাসের মধ্যে ১ লক্ষ টাকা দিতে বলা হয়েছে। যেহেতু আমরা তাকে ভয় দেখিয়েছে তাই শাহাবুলকে টাকা ফেরত দেয়া হবে।
নাম প্রকাশ করা যাবে না এখন শর্তে এক স্কুল শিক্ষক জানান, কালকে ওই গ্রাম্য সালিশে আমি উপস্থিত ছিলাম। দু’পক্ষের মধ্যে টাকা পয়সা দিয়ে মীমাংসা চলছিল। এমন সময় দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে হাতাহাতি শুরু হয়। এতে কয়েকজন আহত হয়। ছেলেটিকে ঘরের মধ্যে বন্দি করে উভয় ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যরা জোরপূর্বক এমন জরিমানা আদায় করেছেন যা আমাদের কাম্য ছিলনা।
উক্ত সংবাদটি সঠিক হয়ে থাকলে তা ফৌজদারি অপরাধ যা শাস্তিযোগ্য মর্মে উল্লেখ করে আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ কে নির্দেশ প্রদান করেন। আগামী ১৬/০৬/২২ তারিখ তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের জন্য আদালত দিন ধার্য করেন।