দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের নবনির্মিত ভবন বিজয়-৭১ এ বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার (১৬ মে) অবকাশ শেষে কোর্ট খোলার দিনে নতুন এ ভবনে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।
সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রমে গতি আনয়ন, বিচারপতির নিজস্ব চেম্বার সংকট নিরসন ও বিচারকক্ষ (এজলাস) বৃদ্ধির নিমিত্তে ১৫৮ কোটি চার লাখ ২২ হাজার টাকা ব্যয়ে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন ১২ তলা নান্দনিক এ ভবন নির্মাণ করা হয়।
বিজয়-৭১ ভবনের নামকরণ এবং এর উপর তলা থেকে আশপাশের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে বটে, তবে বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর নতুন এ ভবনের অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোগত বিষয়ে নানা অভিযোগ উত্থাপন করেন আইনজীবীরা।
বিশেষত ভবনটির এজলাসে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের উপস্থিত হতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন বিশাল এই ভবনের লিফটের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। এছাড়া বিচারপতিদের প্রাইভেসিও নষ্ট হবার উপক্রম হয়েছে উল্লেখ করে তারা বলছেন, আদালতে বারান্দায় বিচারপতি আর আইনজীবীদের সচরাচর দেখা হওয়াটা ঠিক শোভনীয় নয়।
সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট তানজিম আল ইসলাম ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, এই ভবন থেকে বাইরের দৃশ্যাবলি দেখে পুলকিত হতেই হয়। তবে এই পুলকিত হবার সাথে মনে বড় শংকা জাগে। এই অগোছালো ভবনটি নকশা করার সময় আইনজীবী নেতৃবৃন্দের কোন মতামত নেয়া হয়েছিল কিনা জানি না। আদালতকে কিন্তু যেকোন সরকারি অফিসের স্থাপনার সাথে মিলালে হবেনা।
আইনজীবী তানজিম বলেন, বিজয়-৭১ ভবনের নামকরণ এবং এর উপর তলা থেকে যে ভিউ দেখে তেজদীপ্ত হয়েছি ঠিক ততটাই হতাশ হয়েছি এই ভবনে অবস্থিত কোর্টগুলোতে এটেন্ড করা কতটা দুঃসহ হয়ে দাঁড়াবে এই ভেবে। বিশেষ করে সিনিয়র আইনজীবীদের কতটা ভোগান্তি হবে তাই ভাবছি।
নতুন ভবন নিয়ে আইনজীবীদের এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকিরের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে তিনি জানান, বিজয়-৭১ ভবনে আইনজীবীদের চলাচল ও অন্যান্য বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের বিষয়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতির সাথে কথা বলেছি। তিনি অতিদ্রুত এর সমাধান করবেন বলে জানিয়েছেন। আশা করি অচিরেই এর একটা সুন্দর সমাধান হবে।
সমিতির সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নূর দুলাল ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বলেন, নতুন ভবন নিয়ে আইনজীবীদের অভিযোগের বিষয়ে অবগত আছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা হয়েছে। আশা করি শিগগিরই এর একটি সহজ সমাধান করা যাবে।
এদিকে যেহেতু ভবনটি হয়েই গেছে, বিচারপ্রার্থীদের স্বার্থে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন অ্যাডভোকেট তানজিম। তিনি বলেন, দ্রুত কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করলে আইনজীবী-বিচারপ্রার্থীদের দুর্দশা নিরসন হতে পারেন। প্রথমত, নতুন ভবনে শুধু দেওয়ানি একক বেঞ্চ, ডেথ রেফারেন্স এবং শুনানির বেঞ্চগুলো স্থানান্তর করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, কোন মোশন বেঞ্চ নতুন ভবনে রাখা উচিত হবে না। তৃতীয়ত, এনেক্স ভবনের ৪ তলা থেকে বিভিন্ন প্রশাসনিক অফিস নতুন ভবনে সরিয়ে ৪ তলায় নতুন আদালত স্থাপন করা। আশা করি এতে করে ভোগান্তি কিছুটা লাঘব হবে।