মোঃ শহীদুল্লাহ মানসুর: সাম্প্রতিক সময়ে ছোট-বড় সবধরণের অপরাধ অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে কিশোর অপরাধসহ হত্যা, নির্যাতন করার প্রবণতা। বৃদ্ধি পেয়েছে ধর্ষণের সংখ্যা। এই বিকৃত ও পাশবিক নির্যাতন থেকে মুক্তি পাচ্ছে না বৃদ্ধা ও শিশুরাও। ধষর্ণের পর হত্যার ঘটনাও যেন নিত্যদিনের। এছাড়াও নারী ও শিশুসহ যেকোন ব্যক্তিকে হত্যা, গুম বা অপহরণের পর হত্যা বা প্রকাশ্যে গুলি করে বা অন্য কোন ভাবে হত্যা ও হত্যা চেষ্টা বেড়েছে কয়েকগুণ।
এ পরিস্থিতিতে দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিক উদ্বিগ্ন। এই উদ্বিগ্নতা থেকেই প্রতিবাদী কন্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে, “এধরণের অপরাধীদের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা ক্রসফায়ার করা হোক”। প্রতিবাদী কন্ঠের সাথে সুর মিলিয়ে মাননীয় আইন প্রণেতারাও মহান জাতীয় সংসদে ক্রসফায়ার বা মৃত্যুদণ্ড দিয়ে দাগী অপরাধীদের হত্যা করার পক্ষে মতামত দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে আমরা আলোচনা করতে পারি, একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা ক্রসফায়ার কতোটা আইন সম্মত ও জন-কল্যাণে আসবে।
ক্রসফায়ার
কোনো গণতান্ত্রিক দেশে আইনী কর্মকাণ্ডের মধ্যে ‘ক্রসফায়ার’ একটি সন্ত্রাসী ব্যবস্থা। বিচারবহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের প্রকৃত বিচার করা সম্ভব নয়। কথিত আছে, এ পদ্ধতিতে কোনো নাটকীয় ঘটনা সৃষ্টির মাধ্যমে মেরে ফেলা হয় কোনো মামলা বা অপরাধের আসামী বা সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে। ক্রসফায়ারে যে শুধুমাত্র সন্ত্রাসীরাই নিহত হচ্ছে এমনটা কিন্তু নয় বরং অনেক ক্ষেত্রে নিহত হচ্ছে সাধারণ মানুষও। আপাতদৃষ্টিতে ক্রসফায়ার খুব কার্যকরী একটি পদ্ধতি মনে হয় সবার কাছেই।
এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সন্ত্রাসীদের ধরে এবং অপরাধের ঘটনা সতেজ থাকতে থাকতেই বা দ্রুত সময়ের মধ্যেই মেরে ফেলে সেই সকল চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের যারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার বা নির্যাতন করছে বা করে আসছে। ফলে যারা রাজনীতির তত্ত্ব বোঝে না, তাদের কাছে “ক্রসফায়ার” জনগণের কল্যাণের জন্যই করা হচ্ছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু এটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিরীহ মানুষের বা তাঁর পরিবারের সারাজীবনের কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়ায় বা দাঁড়াচ্ছে বা দাঁড়িয়েছি।
কিন্তু সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার রয়েছে। আরো ৩২ অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে যে, আইনানুগ প্রক্রিয়া ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
ক্রসফায়ের ঘটনা গুলোয় সবসময় একধরনের ধোয়াশা থেকে যায়। অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসৎ কর্মকর্তা নিজ বা কোন ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণিতভাবে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে ফলে যাদের হাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব, তাদেরই আইনের অপব্যবহার করে দেশ ও জাতিকে মোহে ফেলে আরো অপরাধ করার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়।
এ বিষয়ে আইন ও আদালতের রায়
এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিম্মায় থাকা অবস্থায় কোনো ব্যক্তির উপর নির্যাতন বা হত্যা রোধ করার জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়। নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ২(৭) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে বা আটক থাকাকালে মৃত্যুবরণ (অস্বাভাবিকভাবে) করে তা হেফাজতে মৃত্যুর হিসাবে বিবেচিত হবে।
এমনটি হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ছড়াও তৃতীয় ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষে মামলা দায়ের করতে পারবে (ধারা ৬)। ধারা ১৫ (২) বলা হয়েছে, নির্যাতনের ফলে মৃত্যুর জন্য দোষী ব্যক্তি অন্যূন যাবজ্জীবন বা অর্থদন্ডে দণ্ডিত হবেন। এই আইনের ৩ ধারায় আরো বলা হয়েছে যে, অন্য কোন আইনে যাই থাকুক এই আইনের বিধান প্রাধান্য পাবে।
BLAST and others vs. Bangladesh and others [Extra-Judicial Killing Case] Writ Petition No. 4152 of 2009, রিটের প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞ আইনজীবীরা মহামান্য আদালতের সামনে উপস্থাপন করেন যে, বাংলাদেশ সংবিধানের ৩১, ৩২, ৩৫ অনুচ্ছেদে কোন নাগরিকের জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকাররক্ষণ, আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারসহ জীবনের নিরাপত্তা দিয়েছে।
এক্ষেত্রে মহামান্য আদালত রুল জারী করেন যে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও এনকাউন্টারকে কেন অবৈধ করা হবে না? ও যারা এর সাথে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল ও ক্রিমিনাল প্রসেডিং শুরু করা হবে না? তা ৪ সপ্তাহের মধ্যে ব্যাখ্যা করতে বলা হয়েছে। যদিও এই রিটের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি তবে এটি একটি সময় উপযোগী প্রশ্নের উদ্ভাবন করেছে। বলা যেতেই পারে যে, বিচারবহির্ভূত হত্যা সম্পর্কে আদালত অবগত ও সচেতন।
৩৭ বিএলডি ২৭১, প্যারা ৩৭’ স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, একজন দাগী আসামীরও আদালতে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার লাভের অধিকার রয়েছে। তার অপরাধের জন্য যৌথবাহিনী দ্বারা তাকে শারীরিক নির্যাতন অথবা হত্যা করা যাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা যৌথবাহিনী আইন তাদের নিজের হাতে তুলে নিতে পারবে না, এটি সংবিধানের লঙ্ঘন।’
সুতরাং বিচারবহির্ভূত হত্যাকে সমর্থন করার সুযোগ নেই কারণ একজন নিরপরাধ বিচারবিহীন ভাবে মারা যাক তা কারোরই কাম্য নয় বরং বিচারিক প্রক্রিয়ায় কোনো অপরাধী সে যতবড় অপরাধ করুক না কেন তাঁর ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে আর এতেই সামাজিক ও বিচারিক ভারসাম্য থাকবে।
মৃত্যুদণ্ড
অপরাধ পরিস্থিতি দিনে দিনে এতোটাই বীভৎস হচ্ছে যে ধর্ষণ বা খুন বা অন্যান্য বিকৃত ও জঘন্য গুরুতর অপরাধের জন্যে সর্বোচ্চ শাস্তি “মৃত্যুদন্ড” এর বিকল্প অন্য কোন শাস্তি বিবেচনা করা যায় না। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন ধর্ষণের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড বা ক্রসফায়ারের মাধ্যমে ধর্ষকের মৃত্যু নিশ্চিত করা গেলেই সমাধান আসবে। অন্যান্য গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রেও শাস্তির মাত্রা সর্বোচ্চ নির্ধারণ করা গেলে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এ পন্থায় অন্যায় ও অবিচার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অধিক।
উদাহরণের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা যাক, কোনো আইন যখন সংসদে পাশ করা হয় তখন তা জন-সাধারণের জন্যই করা হয় যা দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য সম ও যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করা যায়। কিন্তু একটি অপরাধের সাথে যুক্ত একাধিক ব্যক্তির ভূমিকা ঐ অপরাধে এক এক রকমের গুরুত্ব বহন করতে পারে। সুতরাং যিনি প্রধান আসামী তাঁর ও উক্ত অপরাধের শেষ নম্বর আসামীর একই শাস্তি হলে তা ন্যায্য বিচার হয় না।
উদাহরণ, যদি “ক” ব্যক্তি তাঁর বন্ধু “খ” কে আকস্মিক কোনো কাজের জন্য আমন্ত্রণ জানায় ও “খ” বিস্তারিত না জেনেই “ক” এর সাথে চলে যায়। “খ” পার্শ্ববর্তী কোন জায়গায় অবস্থান কালে “ক” কোন এক মেয়েকে ধর্ষণ করে। উপস্থিত সকলে “ক” ও ”খ” কে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে এবং দণ্ডবিধির ৩৪ ধারা মোতাবেক ঘটনা আমলে নিয়ে পুলিশ উভয়ের নামে ধর্ষণ মামলা দায়ের করে। এখন যদি ধর্ষণের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয় তবে “খ” কেও একই শাস্তি দিতে হবে যা সম্পূর্ণ ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। কেননা সে যেমন ধর্ষণের সাথে যুক্ত ছিল না সাথে সে একই মনমানসিকতাও রাখে না। ফলে দণ্ডবিধির ৩৪ ধারায় তাকে একই মামলায় যুক্ত করা গেলেও তাকে ভিন্ন শাস্তির মুখোমুখি করা উচিত কেননা সে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার মত অপরাধ “খ” করে নি।
এ বিষয়ে আইন ও আদালতের রায়
ব্লাস্ট ও অন্যান্য বনাম বাংলাদেশ (BLAST and another vs. Bangladesh and others [‘Shukur Ali’ Case] Writ Petition No. 8283 of 2005), ১৯৯৯ সালে শুকুর আলী নামের এক ১৪ বছরের বালক ৭ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করে। মামলা হয় “নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯৫” এর ৬(২) ধারায়। ২০০১ সালে উক্ত মামলার রায় হয় তাতে বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। কারণ “নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯৫ এর ৬(২) ধারা অনুযায়ী আর অন্য কোনো শাস্তির ব্যবস্থা ছিল না। আপীল বিভাগেও মামলার রায় বহাল থাকে।
পরবর্তীতে ব্লাস্ট উক্ত মামলার উপর রিট পিটিশন করে রায়কে চ্যালেঞ্জ করে। যুক্তিতে বলা হয়েছিল, একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অস্ংবিধানিক। এই যুক্তিতে বলা হয়, “কোনো অপরাধের শাস্তি একমুখী হওয়াকে কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা বা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া বুঝায়” যা বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৫ আর্টিকেল ও ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অফ হিউম্যান রাইটস (UDHR), ১৯৪৮, এর ৫ আর্টিকেল ও বলা হয়েছে। যুক্তিতে আরো বলা হয়েছে, ১৮ বছরের নিচে কাউকে মৃত্যুদন্ডের শাস্তি দেওয়া যাবে না- আর্টিকেল ৬.৫ (ICCPR)। তাহলে শুধুমাত্র বা একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা থাকলে অনেক গুলো প্রশ্নের সৃষ্টি হতে পারে যেমন অপরাধ যদি প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি না করে তবে তাঁর শাস্তি কেমন হবে, তা উপযুক্ত হবে কি না বা শাস্তি কার্যকর কিভাবে কার্যকর করা হবে ইত্যাদি।
এছাড়াও ভারতের সুপ্রিম কোর্ট, মিঠু বনাম স্টেট অফ পাঞ্জাব, ১৯৮৩ মামলায় টেরোরিজম, ড্রাগ বা সাম্প্রাদায়িক সংঘাতের জন্য যে বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল তা অসংবিধানিক (Constitutionally Inoperable) ঘোষণা করে মাহামান্য আদালত। Sunil Batra v. Delhi Administration & Others, 1978, মামলায় বলা হয়েছে যে, “a fair, just, and reasonable procedure precluded cruel and degrading punishment”
যদিও দণ্ডবিধি ১৮৬০ সালের ৩০৩ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি কোন খুন করেন তবে তাঁর বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান আছে। এটি নিয়ে বিতর্ক আছে। কেননা এই ধারার অপ্রয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক।
সুতরাং কোনো অপরাধের শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ড কাম্য নয় বরং বিকল্প শাস্তির ব্যবস্থা থাকা উচিত। তবে অপরাধ কোন রকম সন্দেহ ছাড়াই প্রমাণিত হলে এবং অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় সর্বোচ্চ শাস্তি কাম্য।
মন্তব্য ও সুপারিশ
মানুষ মাত্রই অপরাধ প্রবণতা বিদ্যমান। কিন্তু মানুষ তাঁর মস্তিষ্কের উপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে। কোন ব্যক্তি অপরাধ থেকে মুক্ত থাকবে কিনা তা নিয়ন্ত্রিত হয় তাঁর নিজের দৃষ্টি ভঙ্গি ও সুচিন্তিত বিবেচনা করার ক্ষমতার উপর। কাউকে আইনি বিধি বিধান দিয়ে সম্পূর্ণরূপে অপরাধ থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব হয় না। মনস্তাত্তিক ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি পরিবর্তন করা গেলে অপরাধ করার প্রবণতা কিছুটা কমানো সক্ষম হবে। নিচে কিছু পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করা যায়;
১. ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় সব দেশের মানুষই শত শত বছর শোষিত হওয়ার কারণে তাদের মাঝে আইন অমান্য করার প্রবণতা অনেক বেশি, আবার অনেকেই আইন অমান্য করাকে সাহসী ও গৌরবের কাজ মনে করে। সুতরাং প্রথমে মানুষকে আইন সম্পর্কে জানাতে হবে এবং মেনে চলার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।
২. সাধারণ মানুষ তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়। সচেতনতা বুদ্ধির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৩. ন্যায় ও দ্রুত বিচারের সবচেয়ে বড় বাঁধা, তদন্ত ও চার্জশিট গঠনে ধীর গতি। ধর্ষণের মতো ঘটনায় আলামত ৭২ ঘণ্টার মাঝে সংগ্রহ করতে না পারলে তা পরে সংগ্রহ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। সুতরাং এই ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব আলামত সংগ্রহের জন্য ধর্ষিতা বা তাঁর পক্ষের কেউ ও তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সচেতন থাকতে হবে। এছাড়াও অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রেও দ্রুত আলামত সংগ্রহ করা জরুরী নইলে প্রকৃত অপরাধী ও অপরাধ নির্ণয় ও বিচার করা সম্ভব হয় না।
৪. বিচার প্রক্রিয়ায় সাক্ষী হাজির হওয়া বা না হওয়ার উপরেও মামলা চলার গতি নিয়ন্ত্রিত হয়। সুতরাং সাক্ষিকেও সচেতন ও আন্তরিক হতে হবে। সাক্ষ্য গ্রহণের দিনে অবশ্যই উপস্থিত থেকে দ্রুত বিচার কার্যে সহায়তা করতে হবে।
৫. মিথ্যা মামলা অর্থাৎ অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণিত মামলা হয় অনেক। এইধরনের মামলা প্রকৃত মামলার গতিকে ব্যাহত করে সুতরাং এধরনের মামলা করা থেকে বিরত থাকলে, আসলেই যারা নির্যাতিত তাঁরা দ্রুত সময়ে ন্যায় বিচার পাবে।
৬. মামলা করার ক্ষেত্রে তামাদি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলা দায়ের ও শেষ করা এবং মামলার ফ্রেমিং এ সচেতন থেকে মূল অপরাধীকে মামলায় যুক্ত ও ধারা উল্লেখ করতে হবে। নইলে পরে তা পরিবর্তন করতে সময় নষ্ট হয়ে থাকে।
সর্বোপরি, মানুষের মন মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। অপরাধকে অপরাধ হিসাবেই বিবেচনা করতে হবে সেটা নিজের পরিবারের কেউ অপরাধ করলেও সে অপরাধী। অনলাইনে লম্বা লেখুনী দিয়ে রাস্তায় গিয়ে সেই অপরাধই যদি করেন তবে যত কঠোর আইন তৈরী করা হোক না কেন অপরাধ ঠেকানো সম্ভব হবে না। লেখুনির সাথে বাস্তব জীবনে অপরাধকে অপরাধ হিসাবেই গণ্য করতে হবে এবং অপরাধ বিরত থাকতে হবে ও আশেপাশের সবাইকেও বিরত রাখতে হবে। সম্মিলিত চেষ্টায় অপরাধ ঠেকানো সম্ভব হবে।
লেখক: শিক্ষানবিশ আইনজীবী; জজ কোর্ট, ঢাকা ও দিনাজপুর।