১৯৯২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আয়-ব্যয়ের হিসাব ও তহবিলের উৎস, কমিটির নেতাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং গণকমিশনের শ্বেতপত্রসহ অতীতে তাদের প্রকাশিত শ্বেতপত্রের আর্থিক জোগান ও আয়-ব্যয় সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) স্মারকলিপি প্রদান করেছে ইসলামি কালচারাল ফোরাম বাংলাদেশ।
আজ সোমবার (২৩ মে) দুপুরে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন ফোরামের নেতারা। চেয়ারম্যানের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন দুদক সচিব মাহবুব হোসেন।
স্মারকলিপি প্রদান শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে ইসলামি কালচারাল ফোরামের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, নিম্নবিত্ত ও নিন্ম মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীরা কওমি মাদরাসা থেকে শিক্ষা নেয়। সরকারি অনুদান না নিয়ে আমরা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষিত জাতি গঠনে আমরা নিরবচ্ছিন্ন কাজ করে যাচ্ছি, অথচ আমাদের উৎসাহ না দিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তারা এসব হীন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে সংঘাত ঘটাতে এসব কর্মকাণ্ড করা হচ্ছে। যারা আমাদের রাজপথে নামতে বাধ্য করছে তাদের অভিযোগ প্রতাহারের জন্য আমরা দুদককে আহ্বান জানিয়েছি। পাশাপাশি তাদের আয়-ব্যয় ও অর্থের উৎস খুঁজে বের করতে আমরা দুদককে অনুরোধ করেছি।
স্মারকলিপি প্রদানে নেতৃত্ব দেন ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা গাজীপুর দেওনার পীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী।
স্মারকলিপিতে যা বলা হয়
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক ককাসের নিজস্ব উদ্যোগে গঠিত বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গঠিত কথিত ‘গণকমিশন’ একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। বিগত ১২ মে শ্বেতপত্রের একটি কপি দুদক চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকাশিত শ্বেতপত্র, শ্বেতপত্রের তদন্ত, তদন্তের বিষয় ইত্যাদি নিয়ে দেশে তুমুল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় গত ২১ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গণমাধ্যমে বলেছেন, এই গণকমিশনের কোনো আইনি ভিত্তি নেই।
এভাবে আইনি ভিত্তি না থাকার পরও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানাবিধ বিতর্কিত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। অতীতে একাধিকবার মনগড়া গণকমিশন গঠন করে গবেষণার নামে উসকানিমূলক নানা তথ্য দিয়ে দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার হীন চেষ্টা করেছে। অতীতে তাদের এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাজকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এই সুযোগে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক ককাসের যৌথ উদ্যোগে ‘মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’ শীর্ষক আরেকটি কমিশন গঠন করে। এই কমিশন ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন’ শীর্ষক একটি বিশাল শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। এ কাজে তাদের বিশাল অর্থ খরচ হয়েছে। আইনি ভিত্তিহীন এমন কাজে তাদের পানির মতো অর্থ খরচের বিষয়টি স্বাভাবিক মনে হয় না।
এমতাবস্থায় এই সংগঠনের আয়ের উৎস, অর্থের জোগানদাতা, আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে। বিশেষ করে দৃশ্যমান কোনো আয়ের উৎস না থাকার পরও গণকমিশনের নেতৃবৃন্দের বিলাসী জীবন যাপনের প্রেক্ষিতে বলা চলে, তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য তৃতীয় কোনো পক্ষের হয়ে কাজটি করেছে। তাই দুদকের প্রতি আমাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ, গণকমিশনের সচিবালয় কাদের অর্থে পরিচালিত হয়, কারা কেমন সুবিধা ভোগ করেন, সেখানে সন্দেহজনক কোনো লেনদেন হয় কি না তা খুঁজে বের করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যেগ নেবেন।
সেই সঙ্গে গণকমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, জাতীয় সংসদের সদস্য রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান, কমিশনের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ, কমিশনের সচিবালয়ের সমন্বয়কারী কাজী মুকুল, সদস্য অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবু, ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী, সাংবাদিক আবু সালেহ রনি, মাওলানা হাসান রফিক, সাংবাদিক সৈয়দ নূর-ই-আলম, সমাজকর্মী শেখ আলী শাহনেওয়াজ, সমাজকর্মী মো. সাইফউদ্দিন রুবেল, সমাজকর্মী তপন দাস, সমাজকর্মী শিমন বাস্কে ও সাংবাদিক সাইফ রায়হানসহ গণকমিশন সচিবালয়ের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্যদের সম্পদের উৎস, ব্যাংক হিসাব, স্থাবর অস্থাবর সম্পদ সম্পর্কে অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
দুদকে গণকমিশনের শ্বেতপত্র ও ১০০ সন্দেহভাজন ‘ধর্ম ব্যবসায়ী’র ব্যক্তির তালিকা
এক হাজার মাদরাসার তথ্য-উপাত্তের ওপর তদন্ত করে ১০০ ধর্ম ব্যবসায়ীর দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তালিকা জমা দিয়েছিল ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমন্বয়ে গঠিত গণকমিশন।
গত ১১ মে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লার কাছে এই শ্বেতপত্র ও ১০০ সন্দেহভাজন ধর্ম ব্যবসায়ীর ব্যক্তির তালিকা তুলে দেওয়া হয়। গণকমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সদস্য সচিব ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তালিকা জমা দেওয়ার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেছিলেন, আমরা ৯ মাস তদন্ত করেছি। বহু ভুক্তভোগীর সাক্ষ্য নিয়েছি। ২২শ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন গত মার্চে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিয়েছি। তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমরা দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছি। তারা মানিলন্ডারিং করেছে। জামায়াত ও ধর্ম ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে অর্থায়ন করা হচ্ছে। সেই দুর্নীতির তথ্য দিলাম। তাদের বাড়তে দেওয়া যায় না।