ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) অবসরপ্রাপ্ত সচিবদের এককালীন শতভাগ আনুতোষিক এবং নিয়মিত উৎসব ভাতা প্রদান না করা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিবাদিদের জবাব দিতে আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এ সংক্রান্ত রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার (২৪ মে) বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার মোঃ মাজেদুল কাদের। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
আদেশের বিষয়টি ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
ব্যারিস্টার পল্লব বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের সচিবগণ অবসর গ্রহণকালে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী গ্রস পেনশনের ৫০% বাধ্যতামূলক সমর্পণ করে তার বিপরীতে আনুতোষিক পেয়েছেন। কিন্তু গ্রস পেনশনের বাকি ৫০% সমর্পণ করা সত্ত্বেও কোন ধরনের আনুতোষিক পাননি।
তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সমর্পিত বাকি ৫০% এর বিপরীতে তারা উক্ত টাকার অর্ধেক হারে এককালীন আনুতোষিক প্রাপ্য হবেন। কিন্তু কোন সুস্পষ্ট কারণ ছাড়াই তাদের বাকি আনুতোষিক আটকে দিয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যা শুধু বেআইনি নয় বরং অবসরপ্রাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ সচিবদের সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকারের চরম লংঘন এবং বৈষম্যমূলক।
এই আইনজীবী বলেন, ২০১১ সালের স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) কর্মচারী চাকুরী বিধিমালা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের সচিবগণ পরিষদের নিজস্ব কর্মচারী। বিধিমালা অনুযায়ী যেহেতু তারা অন্যান্য সরকারি কর্মচারীর ন্যায় মাসিক পেনশন এর আওতাভুক্ত নয় সেহেতু গ্রস পেনশনের সমস্ত টাকা সরকারের নিকট সমর্পণ করে গ্রস পেনশনের সমুদয় পরিমাণ থেকে মোট ৭৫% এককালীন আনুতোষিক পাওয়ার বিধান রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এছাড়া ২০১১ সালের বিধিমালা অনুযায়ী তাদেরকে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতা প্রদান এবং উৎসব ভাতা দেয়ার বিধান রয়েছে।
কিন্তু তাদের সম্পূর্ণ আনুতোষিক প্রদানে অস্বীকৃতি এবং কোন ধরনের উৎসব ভাতা প্রদান না করা আইনের সুস্পষ্ট লংঘন।
সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, এছাড়াও ১৯৯৪ সালের ইউনিয়ন পরিষদ কর্মচারী (ভবিষ্য তহবিল এবং আনুতোষিক) বিধিমালা অনুযায়ী সচিবগণ সরকারি কর্মচারী ন্যায় পেনশন, আনুতোষিক এবং উৎসব ভাতা পাওয়ার হকদার।
আইনের সুস্পষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও অবসরপ্রাপ্ত সচিবদেরকে সম্পূর্ণ আনুতোষিক এবং কোন প্রকার উৎসব ভাতা প্রদান না করা বেআইনি, নিপীড়নমূলক এবং অযৌক্তিক। আনুতোষিক এবং উৎসব ভাতা প্রাপ্তি একজন সরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারির ন্যায্য অধিকার যা থেকে কোন ভাবেই তাকে বঞ্চিত করা যাবে না। অথচ সারাদেশে হাজার হাজার অবসরপ্রাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদের সচিবদের কে তাদের আইনানুগ অবসরকালীন সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে উল্লেখ করে আদালতে এসব যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান রিটকারী পক্ষের আইনজীবী।
এর আগে কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট থানার ঢালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের অবসরপ্রাপ্ত সচিব মোঃ ইউসুফ ভূঁইয়াসহ ১৪৭ জন অবসরপ্রাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের প্রায় ১০ কোটি টাকা বকেয়া আনুতোষিক এবং তাদেরকে বিধিমালা অনুযায়ী নিয়মিত উৎসব ভাতা প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে রিটটি দায়ের করে।
রিটে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব সহ ৩১ জনকে বিবাদী করা হয়।
এর আগে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। নোটিশ প্রাপ্তির পরেও এই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় রিট দায়ের করা হয়।