অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ ট্রাস্টির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ঢাকার একটি আদালত।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিত আজ মঙ্গলবার (২৪ মে) ঢাকার সিনিয়ার স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন।
ওই ছয়জন হলেন- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান এবং আশালয় হাউজিং ও ডেভেলপারস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী।
দুদকের কোর্ট পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে সোমবার (২৩ মে) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ চার ট্রাস্টিকে একদিন করে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন। তারা হলেন- রেহানা রহমান, এম এ কাশেম, মোহাম্মদ শাহজাহান ও বেনজীর আহমেদ।
এদিন দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে আদালতে তাদের হাজির করে পুলিশ। এরপর দুদক তাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা কারাগারে প্রথম শ্রেণির ডিভিশন চেয়ে আবেদন করেন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তাদের ৭ কার্যদিবসের মধ্যে একদিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্দেশ দেন। এছাড়া কারাবিধি অনুযায়ী তাদের ডিভিশন দেওয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষে নির্দেশ দেন।
গত রোববার (২২ মে) তাদের আগাম জামিনের আবেদন সরাসরি খারিজ করে আদেশ দেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ। একইসঙ্গে তাদের শাহবাগ থানার হেফাজতে দেওয়া হয়।
দুদকের মামলা
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে, তা আত্মসাতের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে গত ৫ মে মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের অনুমোদন/সম্মতির মাধ্যমে ক্যাম্পাস উন্নয়নের নামে ৯ হাজার ৯৬ দশমিক ৮৮ ডেসিমেল জমির দাম ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা বেশি দেখিয়ে, তা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের হীন উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও বেশি দাম দেখিয়ে তারা প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা প্রদান করেন। পরবর্তীতে বিক্রেতার নিকট থেকে নিজেদের লোকের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আবার নিজেদের নামে এফডিআর করে রাখেন এবং পরবর্তীতে নিজেরা উক্ত এফডিআরের অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।
অবৈধ ও অপরাধলব্ধ আয়ের অবস্থান গোপনের জন্য ওই অর্থ হস্তান্তর ও স্থানান্তর মাধ্যমে অর্থপাচারের অপরাধও করেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪২০/১৬১/১৬৫ ‘ক’ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২-এর ৪(২)(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড আর্টিকেলস (রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় একটি দাতব্য, কল্যাণমুখী, অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।