সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। মামলা ছাড়া বিনা প্রয়োজনে কেউ এই অঙ্গনে প্রবেশ করতে পারবেন না। বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
বিবদমান দুটি ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সঙ্গে বৈঠক করে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। প্রধান বিচারপতির এই নির্দেশের পরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়েছেন। আগামীকাল রোববার (২৯ মে) থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
গত বৃহস্পতিবার (২৬ মে) ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছাড়াও হামলার ঘটনা ঘটে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে। এ ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে।
দুপুরে এই হামলার ঘটনা জানার পরই বিকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এ সময় আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে পুরো প্রাঙ্গণকে সিসি টিভির আওতায় আনার পাশাপাশি প্রবেশ ফটকে নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দেন। জ্যেষ্ঠ বিচারপতিরাও নিজেদের মত দেওয়ার পাশাপাশি প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। পরে তারা পুরো প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন।
এর আগে দুপুরে হামলার পরই সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান।
বৈঠক সূত্র জানায়, দুটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা যেভাবে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছে তাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুরো ঢেলে সাজানোর সময় এসেছে বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বিচারপতিরা।
বিচারপতিরা বলেন, বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী জনগণের নিরাপত্তাকে সবার আগে প্রাধান্য দিতে হবে। সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে যাতে কেউ কোন ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনার শিকার না হন সেটাও আলোচনায় উঠে আসে। এছাড়া মামলা সংশ্লিষ্ট বিচারপ্রার্থী ছাড়া অন্যদের সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রবিবার থেকে এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের যেসব স্থান সিসিটিভির আওতায় নেই সেসব স্থানকেও ক্যামেরার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. বজলুর রহমান, আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ও হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার গোলাম রব্বানী উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিরা পুরো প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন এবং নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বেশ কিছু নির্দেশনা দেন। এ সময় ডিএমপির রমনা বিভাগের ডিসি মো. সাজ্জাদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের বৈঠক হয়েছে। পুরো সুপ্রিম কোর্টকে সিসিটিভির আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মামলা সংশ্লিষ্ট ছাড়া বিনা প্রয়োজনে কোর্টে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশের জন্য চারটি ফটক রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান ফটক ব্যতীত তিনটি ফটক দিয়ে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন ও বের হন। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবন, অন্যাক্সে ভবন ও সড়ক ভবনে সিসিটিভি রয়েছে। করোনার পূর্বে এসব ফটকে সার্বক্ষণিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিলো। দায়িত্ব পালন করতো সুপ্রিম কোর্টের কর্মচারীরাও। পরে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কিছুটা শিথিল করা হয়। বৃহস্পতিবার হামলার ঘটনায় এখন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হলো।