হোসেন মো. আনোয়ার: ইউরোপ, আমেরিকা বা উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যারা পড়াশোনার উদ্দেশ্যে মুভ করার পরিকল্পনা করছেন তাদের বলছি- বিদেশে পড়তে যাওয়া ও যথাযথভাবে পড়াশোনা সম্পন্ন করে ক্যারিয়ার গড়া একটি ছোটখাটো যুদ্ধের মতোই। তাই যোদ্ধাদের জন্য একটু হতাশার কথা বলে শুরু করছি- বাইরে থেকে ইউরোপ আমেরিকা কালারফুল মনে হলেও এখানে জীবন খুবই কঠিন অর্থাৎ মোটেও কালারফুল নয়।আগমনের কয়েক মাসের মধ্যেই অনেকের স্বপ্নভঙ্গ হতে খুব কাছ থেকে দেখেছি।
আপনি যেই হোন না কেন সকল কাজ আপনার নিজেকেই করতে হবে। অর্থাৎ ধোয়া-মোছা, রান্না ও আনুষঙ্গিক সবকিছু। তাছাড়া আমাদের দেশ থেকে এসে ওয়েদার এডজাস্টমেন্ট করাটা একটু প্রাথমিক ধাক্কা দেয় তবে কিছু সময়ের ব্যবধানে এটা ঠিক হয়ে যায়।
এসব দেশে জব করলে পেমেন্ট বেশ ভালো পাবেন তবে আপনার স্বপ্নের জব পাওয়াটা শুরুতে খুব একটা সহজসাধ্য নয়।তাছাড়া হাড়ভাঙা খাটুনিতো আছেই। They pay you counting every second! তাছাড়া মানবিকবোধের বদলে পেশাদারিত্বের উপস্থিতিই বেশিবেশি নজরে পড়বে। তবে মানবিক মানুষ পাবেন না তা নয়।
পড়াশোনা যারা করতে আসতে চান তারা অবশ্যই মাথায় রাখবেন বেশিবেশি কাজ করে আপনার পড়াশোনা চালিয়ে নেয়া অনেক কঠিন এমনকি কাঙ্ক্ষিত স্কোর অর্জন করা অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে।অনেক ছাত্রছাত্রীকে দেখেছি পরিকল্পিত পড়াশোনা না করার কারণে রেজাল্ট খারাপ করছেন যা তাদের ক্যারিয়ার গড়তে মোটেও সহায়ক নয়।
উন্নত দেশগুলোতে যারা আসতে চান তাদের আরেকটি বিষয় গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেয়া উচিত। আর তা হচ্ছে “মানসিক স্বাস্থ্য”।কিছুদিন যেতে না যেতেই পারিপার্শিক সার্বিক চাপে আপনি লোয়ার ফিল করতে পারেন। সো মাইন্ড ইট এন্ড বি প্রিপেয়ার্ড বিফোর মুভিং। আরেকটি বিষয় না বললেই নয় তা হচ্ছে সময়ানুবর্তিতা, ডিসিপ্লিন, সততা ও ব্যক্তিত্ব আপনাকে ইপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে যাদু মন্ত্রের মতো সাহায্য করবে।
পাশাপাশি খেয়াল রাখবেন, ছেলে হোন বা মেয়ে। কারো উপর ভুলেও অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হওয়া যাবে না।কেননা আপনি জানেন না কে কোথায় আপনাকে ভাঙতে বসে রয়েছে। মিষ্টি কথার আড়ালে অর্থাৎ আপনাকে মধু সংগ্রহের পথ দেখানোর কথা বলে কেউ কেউ চিনি ধরিয়ে দিতে পারেন। তাই ঠেকে বা ঠকে শেখার আগেই সতর্কতা জরুরি।
বিদেশে আপনার মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য সঙ্গী বা বন্ধু বাছাইয়ে সতর্কতার বিকল্প নেই।আপনি আপনার লক্ষ্যে যথাসময়ে পৌঁছাতে চাইলে সৎ ও যোগ্য বন্ধু অপরিহার্য।
অনেকেই জিজ্ঞেস করেন যে এখানে কাজ করে সম্পূর্ণ পড়াশোনার খরচ চালানো সম্ভব কিনা? এক কথায় বলছি- মোটেও না, তবে আপনি আপনার লিভিং এন্ড ফুডিং এক্সপেন্সেস খুব ভালোভাবেই উপার্জন করতে পারবেন (এক্ষেত্রে অল্পকিছু সেইভ করাও সম্ভব হতে পারে)।
শেষকথা হিসেবে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আর তা হলো সুস্থ, কর্মঠ ও নিরোগ দেহ ও স্বাস্থ্য পেতে সঠিক পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। বলা হয়ে থাকে আপনি তাই যা আপনি আহার করেন। উন্নত দেশগুলোতে খাবার অতটা এক্সপেনসিভ নয়।উল্লেখযোগ্য হলো এখানে খাদ্যে ভেজাল নেই।
গুড লাক!
লেখক: হোসেন মো. আনোয়ার; চিফ কো-অর্ডিনেটর, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ল’ অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (আইসিএলএইচআর) এবং আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।