আসামির স্বজনের সঙ্গে ঘুষ লেনদেনের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার সেই ওসি মো. তৌহিদুজ্জামানকে বরিশাল বিভাগে বদলি করা হয়েছে।
চলতি সপ্তাহে তাঁকে বদলি করা হলেও আজ মঙ্গলবার (৩১ মে) স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা বিষয়টি জানতে পারেন। গাইবান্ধার পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এসপি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ওই ওসিকে বরিশাল রেঞ্জে বদলি করা হয়। তবে ঘুষ লেনদেনের ফোনালাপের অডিও ফাঁসের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে কি না, সে বিষয়ে পুলিশ সুপার কোনো মন্তব্য করেননি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তদন্তে যা পাওয়া গেছে, সেগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
চলতি বছরের ১৫ মার্চ সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি তৌহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের ফোনালাপ ফাঁস সংক্রান্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই ফোনালাপটি দেশের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রকাশের পর জেলাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এরপর ওই দিন রাতেই তাকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করে গাইবান্ধা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। পরদিন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) আবদুল আউয়ালকে আহ্বায়ক করে এক সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। পরে তদন্ত প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত উপ-দপ্তর সম্পাদক মাসুদ রানার (৪২) বাসা থেকে শহরের স্টেশন রোডের জুতা ব্যবসায়ী হাসান আলীর (৪৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বীথি বেগম বাদী হয়ে মাসুদসহ তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের হয়। এরমধ্যে আসামি মাসুদের বাসা গাইবান্ধা শহরের নারায়নপুর এলাকায়। মাসুদ রানা একজন দাদন ব্যবসায়ী। অপর দুইজন হলেন- শহরের স্টেশন রোডের জুতা ব্যবসায়ী রুমেল হক ও খলিলুর রহমান।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, প্রায় দুইবছর আগে মাসুদ রানার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নেন ব্যবসায়ী হাসান আলী। এই টাকা সুদ-আসলে ১৯ লাখে দাঁড়ায়। সুদের টাকা দিতে না পারায় গা ঢাকা দেয় হাসান আলী। খোঁজ পেয়ে গত বছরের ৬ মার্চ লালমনিরহাট থেকে হাসানকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে এসে নিজ বাড়িতে রাখেন মাসুদ। এরপর এক মাসের বেশি সময় হাসানকে নিজ বাসায় আটকে রেখেছিলেন মাসুদ।
এই মামলার প্রথমে তদন্ত করেন গাইবান্ধা সদর থানার তৎকালীন পরিদর্শক (অপারেশন) সেরাজুল ইসলাম। পরে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান গাইবান্ধা ডিবি পুলিশের তৎকালীন ওসি ও বর্তমানে সুন্দরগঞ্জের কঞ্চিবাড়ি তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক মানষ রঞ্জন দাস। সর্বশেষ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পান সদ্য বদলি হওয়া ওসি মো. তৌহিদুজ্জামান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি মো. তৌহিদুজ্জামানের সঙ্গে মামলার আসামির এক স্বজনের ঘুষ লেনদেনের ফোনালাপ ফাঁস হয়। মামলার অভিযোগপত্র থেকে এক আসামির নাম বাদ দেওয়া ও আইনের ধারা কমিয়ে দিতে টাকা লেনদেনের কথাবার্তা হয়। কথামত কাজ না হওয়ায় টাকা ফেরত প্রদানে ফোনালাপ হয়। পাঁচ দফায় প্রায় ১৭ মিনিটের ফোনালাপ হয়।
এদিকে ঘটনার বিচারের দাবিতে ব্যবসায়ী ‘হাসান হত্যার প্রতিবাদ মঞ্চ’ গড়ে উঠে। বিচারের দাবিতে দুই মাসব্যাপী আন্দোলন চলে। আন্দোলনের মুখে সদর থানার তৎকালীন ওসি মাহফুজার রহমান, পরিদর্শক (তদন্ত) মজিবর রহমান এবং উপ-পরিদর্শক মোশারফ হোসেনকে অন্যত্র বদলি করা হয়। ঘটনার দিনই মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মাসুদসহ তিন আসামি বর্তমানে জামিনে আছেন।
ঘটনার নয় মাস ছয়দিন পর মাসুদ ও খলিলুরসহ দুইজনের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ১৮ জানুয়ারি তিনি সুন্দরগঞ্জের ওসি হিসেবে বদলি হন। গাইবান্ধা কোর্ট পুলিশ ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে অভিযোগপত্রটি সংশোধনের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে ফেরত পাঠায়। গত ৭ মার্চ মাসুদ রানাসহ তিন আসামিকেই অভিযুক্ত করে আদালতে সংশোধিত অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।