কক্সবাজার থেকে মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী: মাত্র এক হাজার সাতশত টাকার জন্য ফরিদা বেগম (৪০) নামক এক নারীকে খুনের দায়ে ২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড, অনাদায়ে আরো এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেছেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুল্লাহ আল মামুন মঙ্গলবার (৩১ মে) এ রায় ঘোষণা করেন।
যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত আসামীরা হলো- ফরিদপুর জেলার বেদেরগঞ্জ থানার আবুল খালাসী গ্রামের মোঃ হারুন ও ছালেহা বেগমের পুত্র মোঃ ইসমাইল এবং কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার বড় মাছিরপুর গ্রামের ছিদ্দিক আহমেদের পুত্র মনির।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট সুলতানুল আলম।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
কুমিল্লার দাউদকান্দির মাদিমপুর গ্রামের মোঃ মুসলিম এর স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪০) কক্সবাজার শহরের ঝাউতলা গাড়ীর মাঠে ভাড়া বাসায় থাকতেন। ফরিদা বেগম ভাঙ্গারী পণ্য কেনার জন্য ১৭ শত টাকা অগ্রিম দিয়েছিলেন একই এলাকায় অন্য ভাড়াবাসায় বসবাসকারী ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী মোঃ ইসমাইলকে। এই ১৭ শত টাকাই ফরিদা বেগম এর জন্য ‘জম’ হয়ে দাঁড়ায়।
ফরিদা বেগম টাকা দেওয়ার ১৫/১৬ দিন পরও মোঃ ইসমাইল তাকে ভাঙ্গারী পণ্য না দেওয়ায় ফরিদা বেগম ভাঙ্গারী পণ্য দেওয়ার জন্য মোঃ ইসমাইলকে পিড়াপীড়ি করতে থাকে। এ অবস্থায় ভাঙ্গারী পণ্য দেওয়ার কথা বলে ২০০১ সালের ১৯ মার্চ ভোর ৫ টার দিকে ফরিদা বেগমকে মোঃ ইসমাইল তার কক্সবাজার শহরের ঝাউতলা গাড়ীর মাঠের ভাড়াবাসায় ডেকে নিয়ে যায়।
পরে ফরিদা বেগমকে তার স্বজনেরা খোঁজখঁজি করে কোথাও না পাওয়ায় ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী মোঃ ইসমাইলকে সন্দেহজনকভাবে টেকনাফ থেকে আটক করে। মোঃ ইসমাইলকে আটক করার পর সে নিজে এবং মনির ও শালু প্রকাশ চালু নামক আরো ২ ব্যক্তি সহ ফরিদা বেগমকে ধরে নিয়ে একইদিন সকাল ১১ টার দিকে কক্সবাজারের রামু উপজেলার পানেরছড়া ঢালার দক্ষিণ পশ্চিম দিকে জঙ্গলের কাছে নিয়ে তাকে খুন করে বলে স্বীকার করে। খুন হওয়া ফরিদা বেগমের কাছে থাকা ৬ হাজার নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারও খুনীরা লুট করে। মোঃ ইসমাইলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী উল্লেখিত স্থান থেকে ফরিদা বেগমের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় মোঃ ফরিদুল আলম বাদী হয়ে তিন জনকে আসামী করে ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩০২/৩৪ ধারায় কক্সবাজারের রামু থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার রামু থানা মামলা নম্বর: ১২/২০০১ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর: ৪৫/২০০১ ইংরেজি এবং এসটি মামলা নম্বর: ১৪৯/২০০১ ইংরেজি।
বিচার ও রায়
২০০২ সালের ৮ এপ্রিল মামলাটি বিচারের জন্য চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়। মামলায় ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামী পক্ষে সাক্ষীদের জেরা, জব্দ করা খুনের আলামত প্রদর্শন, সুরতহাল, ময়নাতদন্ত, ফরেনসিক প্রতিবেদন যাচাই ও পর্যালোচনা, যুক্তিতর্ক শেষে বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন তিনজন আসামীর মধ্যে ২ জন, যথাক্রমে মোঃ ইসমাইল ও মনিরকে ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩০২/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ঘটনার ২১ বছর পর উপরোক্ত সাজা প্রদান করেন।
দন্ডিত ২ জন আসামীই আদালত থেকে জামিন নিয়ে পলাতক রয়েছে। অন্য আসামি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার রোয়াচর গ্রামের বাদশা মিয়ার পুত্র শালু প্রকাশ চালু মৃত্যুবরণ করায় রায়ে তাকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়।