ডেসটিনির গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় ৪ বছরের সাজাপ্রাপ্ত সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদের জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক ৩৯ জনকে গ্রেপ্তারে রেড নোটিশ জারির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
হারুন-অর-রশিদের জামিন ও আপিল শুনানিকালে আজ বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে হারুনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট রবিউল আলম বুদু। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
পরে আমিন উদ্দিন মানিক জানান, আদালত জামিন আবেদন না মঞ্জুর করেছেন। আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন। মামলার নথি (রেকর্ড কল) তলব করেছেন। এছাড়া আপিল শুনানির জন্য পেপার বুক প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি পলাতকদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছেন। সেইসঙ্গে পলাতকদের গ্রেফতারে সংশ্লিষ্টদের রেড অ্যালার্ট জারির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে গত ১২ মে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের দায়ে ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনকে ১২ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই মামলায় কোম্পানির প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদকে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের’ কথা বিবেচনায় নিয়ে আদালত তার সাজা কমিয়ে দেন বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম এই রায়ে ৪৬ আসামির সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করেন।
ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির প্রায় ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই কলাবাগান থানায় এ মামলা করে দুদক। ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট অভিযোগ গঠন করে আদালত আসামিদের বিচার শুরুর আদেশ দেন।
২০০০ সালে ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড নামে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি দিয়ে এই গ্রুপের যাত্রা শুরু। পরের বছরে বিমান পরিবহন, আবাসন, মিডিয়া, পাটকল, কোল্ড স্টোরেজ, বনায়নসহ বিভিন্ন খাতে ৩৪টি কোম্পানিতে ডেসটিনির নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়।
পরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে চার হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে এ কোম্পানির বিরুদ্ধে।
এর মধ্যে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভের নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল ডেসটিনি। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। তাতে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন।
আইন অনুযায়ী অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের সর্বোচ্চ শাস্তি ১২ বছরের কারাদণ্ড। ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীনকে সেই দণ্ডই দেন আদালত। পাশাপাশি তাকে ২০০ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ বছরের সাজা দেওয়া হয় রায়ে।
আর ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হারুন-অর-রশীদকে চার বছরের কারাদণ্ড এবং সাড়ে ৩ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। চার বছরের দণ্ড এ আইনে সর্বনিম্ন সাজা।
হারুনকে কম সাজা দেওয়ার ব্যাখ্যায় বিচারক তার রায়ে বলেন, হারুন-অর-রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের কারণে তাকে সর্বনিম্ন দণ্ডে দণ্ডিত করা হলো।
হারুনের অবরুদ্ধ সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাবে অবমুক্ত (রিলিজ) করার নির্দেশ দেওয়া হয় রায়ে। তবে জরিমানার তিন কোটি পঞ্চাশ লাখ টাকা তাকে পরিশোধ করতে হবে।