রাজধানীর জুরাইনে তিন পুলিশ সদস্যকে মারধরের ঘটনায় গ্রেফতার ঢাকা আইনজীবী সমিতির দুই সদস্যের অধস্তন আদালতে রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী রোববারের (১২ জুন) মধ্যে এ মামলার নথি পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
রোববারের মধ্যে নথি আদালতে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। ওইদিন পরবর্তী শুনানি হবে। একইসঙ্গে রিমান্ড কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার অনিক আর হক। রিটের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী, অ্যাডভোকেট আজহার উল্লাহ ভুঁইয়া, অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জরুল হকসহ প্রায় ৩০০ আইনজীবী।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী, শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।
এসময় অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে নিশ্চিত করেছেন রিমান্ড সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে এবং ভুক্তভোগীরা জেলহাজতে আছেন।
এর আগে দুই আইনজীবীর রিমান্ড মঞ্জুর করায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের বিচারিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ ফজলে এলাহীর পক্ষে অপর আইনজীবী এবিএম শিবলী সাদেকীন এই আবেদন করেন।
আবেদনে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া ছাড়াও দুই আইনজীবীর রিমান্ড বাতিল চাওয়া হয়েছে এবং তিন পুলিশ সদস্যকে মারধরের ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই মামলা তদন্তে পুলিশ ব্যতীত অন্য কোন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে কেন করা হবে না সে বিষয়ে আর্জি জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (৭ জুন) জুরাইন রেলগেট এলাকায় রাস্তার উল্টোদিক থেকে আসা মোটরসাইকেল আরোহীকে আটকে কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টসহ তিন পুলিশ সদস্যকে মারধর করা হয়।
আহতরা হলেন- ট্রাফিক সার্জেন্ট আলী হোসেন, ট্রাফিক কনস্টেবল সিরাজুল ইসলাম ও শ্যামপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) উৎপল দত্ত অপু।
জানা যায়, সকাল ৯টার দিকে জুরাইন রেলগেট সড়কের উল্টোদিক দিয়ে স্বামী ইয়াসিনের সঙ্গে মোটরসাইকেলযোগে আসছিলেন অ্যাডভোকেট নিশাত। এসময় সার্জেন্ট আলী হোসেন ও ট্রাফিক কনস্টেবল সিরাজ তাদের গতিরোধ করেন।
নিশাত নিজেকে অ্যাডভোকেট পরিচয় দিয়ে সার্জেন্ট আলী হোসেনের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হন। এক পর্যায়ে ইয়াসিন মোটরসাইকেল থেকে নেমে সার্জেন্ট আলী হোসেনকে ধাক্কা দেন। এসময় অ্যাডভোকেট নিশাত চিৎকার শুরু করলে পাঠাও ও অটোচালকরা সার্জেন্ট আলী হোসেনের ওপর হামলা করেন।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই শ্যামপুর থানায় তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত সাড়ে ৪০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন আহত ট্রাফিক সার্জেন্ট আলী হোসেন।
পরদিন বুধবার এ মামলায় গ্রেফতার ছয় আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় আসামি ইয়াসিন জাহান নিশান ভুঁইয়াকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে পুলিশ। অন্য পাঁচ আসামির সাতদিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্যামপুর থানার পরিদর্শক খন্দকার জালাল উদ্দিন মাহমুদ।
শুনানি শেষে এ ঘটনায় দুই আইনজীবীসহ গ্রেফতার পাঁচজনের তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আর অ্যাডভোকেট ইয়াসিন জাহান নিশান ভূঁইয়া অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় আদালত তাঁর শারীরিক অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে জামিন মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- সোহাকুল ইসলাম রনি ও তার শ্যালক ইয়াসিন আরাফাত ডেইরী, স্থানীয় বাসিন্দা মো. শরীফ, মো. নাহিদ এবং মো. রাসেল।
সোহাকুল ইসলাম বার্তা বিচিত্রা ডটকম নামের একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমের প্রকাশক। তাঁর স্ত্রী ইয়াছিন জাহান ওই সংবাদমাধ্যমের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। এদের মধ্যে সোহাকুল শিক্ষানবিশ আইনজীবী এবং ইয়াসিন জাহান ও তাঁর ভাই ইয়াসিন আরাফাত আইনজীবী।