মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশে পোশাকের কারণে নারীকে হেনস্তার ঘটনা বাংলাদেশে নজিরবিহীন। প্রতিটি নির্যাতনের ঘটনায় দ্রুত অপরাধীদের শাস্তি না হওয়া ও আইনের প্রকৃত বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে অপরাধীরা আরো সক্রিয় হয়ে উঠছে।
আজ রোববার (১২ জুন) বিকাল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে- রাজু ভাস্কর্যের সামনে “আসুন নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলি” স্লোগানকে সামনে রেখে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু; যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম; যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম; বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা; আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি; ঢাকা মহানগর কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মঞ্জু ধর, এবং সংগঠনের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদের সদস্য ডা. নাহিদ নবী লেনা, সিনিয়র অ্যাডভোকেট রাম লাল রাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী রিদিয়া রাকা, ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী নির্জনা ভূঁইয়া।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বর্তমানে মধ্যম আয়ের দেশে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় ক্ষেত্রে নারীর দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান ভূমিকা অনস্বীকার্য। নারীরা দিনে ও রাতে সকল কর্মক্ষেত্রে দৃঢ়তার সাথে কাজ করছে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেই সকল নারীরা স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে কেন চলাচল করতে পারবে না, কেন নিরাপত্তা লংঘিত হবে তা নিয়ে বক্তারা রাষ্ট্র, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সহ সকলের কাছে প্রশ্ন রাখেন।
তারা আরো বলেন, পরপর অনেকগুলো সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশে পোশাকের কারণে নারীকে হেনস্তার ঘটনা বাংলাদেশে নজিরবিহীন। প্রতিটি নির্যাতনের ঘটনায় দ্রুত অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ায়ও আইনের প্রকৃত বাস্তবায়ন না হওয়া, কারণে অপরাধীরা আরো সক্রিয় হয়ে উঠছে।
এসময় তারা নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সকলকে নিশ্চিত ও নির্বিকার মনোভাব পরিহার করে সোচ্চার হওয়ার জন্য, সহিংসতার ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করে তাকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ সকল জায়গায় নিরাপদে ও স্বাধীনভাবে নারীর চলাচল নিশ্চিত করার দাবি জানান।
পাশাপাশি যৌন হয়রানি ও নিপীড়নসহ নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে যৌন হয়রানি-নিপীড়ন রোধে পৃথক আইন প্রণয়নের দাবি জানানো হয় সমাবেশে।
সমাবেশে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিকারে বাংলাদেশ মহিলার পরিষদ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছে। করোনাকালীন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও নারীর প্রতি সহিংসতা থেকে আমরা কোনভাবেই মুক্ত হতে পারছিনা। নারীদের প্রতি যারা ক্রমাগত অশোভন আচরণ করছে তাদের সমাজের কাছে লজ্জিত হওয়া উচিত।
তিনি আরো বলেন, সকল পুরুষ নারীকে অসম্মানের চোখে দেখে বিষয়টি এমন নয়। গোটাকয়েক পুরুষ যারা নারীকে অধ:স্তন ভেবে সহিংসতা, যৌন হয়রানি ও হেনস্তা করছে তাদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
পাশাপাশি তিনি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের আন্দোলনে সকলকে শামিল হওয়ার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর নারীর জন্য নিরাপদ হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
বক্তব্য শেষে সংগঠনের পক্ষে প্রস্তাব পাঠ করেন অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক জনা গোস্বামী। তিনি এসময় সংগঠনের পক্ষে দাবি উপস্থাপন করেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, জাতীয় পরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং সংগঠনের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশ অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন অ্যাডভোকেসি এন্ড লবি পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) অ্যাডভোকেট দীপ্তি সিকদার।