ফাইজুল ইসলাম: সভ্যতার এই যুগে এসেও আমরা পুরোপুরি সামাজিক মানুষ হতে পারি নি। যার ফলশ্রুতিতে আমরা কিছুদিন পর পর বেছে নিই মানুষের বিশ্বাসকে আঘাত করার।ধর্ম অবমাননা করা একটি অপরাধ, আর এই অপরাধকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাজ্য।এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ব্রিটেনিকার তথ্যমতে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যে অধিকাংশ দেশেই ব্লাসফেমিকে ‘অপরাধ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। (১১/৭৪) সুতরাং ব্লাসফেমি বা ধর্ম অবমাননা একটি অপরাধ এটি সর্বজন স্বীকৃত।
ব্লাসফেমি মূলত কি?
গ্রীক ব্লাসফেমন থেকে ব্লাসফেমি আইনটির নাম হয়েছে। এর অর্থ ধর্ম নিন্দা বা ঈশ্বর নিন্দা। এথেন্সের এমন ভয়ানক আইনেই সক্রেটিসের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। ব্লাসফেমি আইন বলতে মূলত কোন ধর্মের ওপর অপবাদ বা কলঙ্ক আরোপ করা বা সম্মানে আঘাত করাকে বুঝায়। অর্থাৎ ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি অসম্মান প্রদর্শনই ব্লাসফেমি। মুসলিম বিশ্বে মধ্য যুগীয় প্রতিক্রিয়াশীল খৃষ্টান পাদ্রীদের অনুসরণে ১৯৮৯ সালে মুসলমানদের মাঝে এটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। যখন লেখক সালমান রুশদি তাঁর লিখিত বই ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ এ ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা ও অবমাননার দায়ে ইরানের রাষ্ট্রীয় ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খমেনি কর্তৃক ব্লাসফেমির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলো এবং সে সময়ে জারিকৃত একটি ফতোয়ার আসামী হিসেবে ঘোষিত হয়েছিলো।
বাংলাদেশে ধর্ম অবমাননার শাস্তি
বাংলাদেশ সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদের (১) এর (ক) তে উল্লেখ হয়েছে, প্রত্যেক নাগরিকের যেকোনো ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রয়েছে। তবে শর্ত হলো, এসব অধিকার চর্চা করতে গিয়ে আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতাবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া যাবে না।
বাংলাদেশ সবিধানের এ অনুচ্ছেদে দফা ও উপদফা থেকে সহজেই বোঝা যায় যে, ধর্ম চর্চা ও পালন একটি সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকারকে অবমাননা করা এবং তার মূল্যবোধে আঘাত করা সংবিধান লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধ।
বাংলাদেশে ব্লাসফেমি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ আইন নেই। কিন্ত কিছু কিছু আইনে ধর্ম অবমাননার শাস্তি আছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ২৮ ধারায় বলা হয়েছে, “যদি কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কিছু ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার করে, তাহলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের সাজা ও জরিমান ২০ লক্ষ টাকা।”
শতবর্ষ ধরে চলা ১৮৬০ সালের বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ২৯৫ ক ধারায় বলা রয়েছে- যদি কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় প্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশের কোন নাগরিককের ধর্মীয় অনুভূতিতে ঘাত দেয়ার অসদুদ্দেশ্যে লিখিত বা মৌখিক বক্তব্য দ্বারা কিংবা দৃশ্যমান অঙ্গভঙ্গি দ্বারা সংশ্লিষ্ট ধর্মটিকে বা কারো ধর্মবিশ্বাসের প্রতি অবমাননার চেষ্টা করে, সে ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তিকে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা অর্থদন্ড কিংবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা যেতে পারে।
বিভিন্ন দেশে ধর্ম অবমাননার শাস্তি
যুক্তরাজ্যে ব্লাসফেমি আইন
ব্রিটেনেও ধর্ম অবমননা একটি অপরাধ। ১৮শতক পর্যন্ত ধর্ম অবমাননা বা ব্লাসফেমির শাস্তি হিলো মৃত্যুদণ্ড। একবিংশ শতকে তা সংশোধন করে আজীবন কারাদণ্ড করা হয়। সংশোধিত আইনটি কমন ল’ (Common Law) নামে পরিচিত। (দ্র. Blackstone Criminal Practice 1995, Chaper-23)
গ্রিসে ব্লাসফেমি আইন
গ্রিস আইন প্যানেল কোড অনুচ্ছেদ ১৯৮, ১৯৯, ও ২০১ হিসেবে ধর্ম অবমাননা অপরাধ হিসেবে গণ্য। ডিজাইন প্যানেল কোড ১৯৮ উল্লেখ আছে,
One who publicly and maliciously and by any means blasphemes God shall be punished by imprisonment for not more than two years; 2. Anyone, except as described in par.1, who displays publicly with blasphemy a lack of respect for things divine, is punished with up to 3 months in prison
“১. যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে ও বিদ্ধেষবশত স্রষ্টাকে নিয়ে বিদ্রুপ করে, তাকে দু’বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
২. কোনো ব্যক্তি জনসম্মুখে ঐশী বিষয়াবলীর প্রতি অসম্মানজনক কোনো কিছু প্রকাশ করলে সে তিন মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রে ব্লাসফেমি আইন
মেরীল্যান্ডের সংশোধিত প্রাদেশিক আইন-১৯৩০ অনুযায়ী এমন কোনো আইন প্রয়োগ করা নিষেধ যা ১৮৭৯ এর কোডিফিকেশনের আওতাধীন, যার মাধ্যমে ব্লাসফেমি ল’-কে ব্যান্ড করা হয়েছিল। এ্যাক্ট- ৭২ এর অনুচ্ছেদ ১৮৯- এ উল্লেখ আছে,
If any person, by writing or speaking, shall blasphemy or curse God or sale writing or utter any profane warrant off and concerning our saviour, Jesus Christ, or of and concerning the Trinity, or any of the persons there of, he shall, on conviction we find not desi then 1000 dollars or imprisoned not more than not more than 6 months, orbahut find in imprisoned s aforesaid at the discretion of the court.”
“যদি কোনো ব্যক্তি তার কোনো লেখা বা কথার মাধ্যমে স্রষ্টাকে অবমাননা ও ভৎর্সনা করে, কিংবা আমাদের ত্রাণকর্তা, যিশু খ্রিস্ট, ত্রিত্ববাদ বা তৎসম্পর্কীয় কারো ব্যাপারে কোনো অমার্জিত শব্দ লেখে বা উচ্চারণ করে, তাহলে তার এক হাজার ডলার অর্থদণ্ড বা ছয় মাসের কারাদণ্ড দণ্ডিত করা হবে। আর আদালত এ দুই শাস্তির যে কোনো একটি অথবা উভয়টি কার্যকর করার ক্ষমতা রাখে।”
আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের এক সিদ্ধান্তে উল্লেখ হয়েছে, কোথাও সংবিধিবদ্ধ আইন (Statutory Law) না থাকলেও সেখানের ধর্ম অবমাননার ক্ষেত্রে ব্লাসফেমি আইন কার্যকর হবে। (20 PIK 206) ম্যাসাচুসেট্স, মিশিগান, ওকলাহোমা, সাউথ ক্যারোলিনা ইত্যাদি প্রদেশের আইনে ব্লাসফেমি ল’ এখনও বিদ্যমান। উদাহরণস্বরূপ ম্যাসাচুসেট্সে জেনারেল ল’-এর অনুচ্ছেদ-৩৬ অনুযায়ী:
Whoever wilfully blasphemes the holy name of God by denying, cursing or contumeliously reproaching God, his creation, government or final judging of the world, or by cursing or contumeliously reproaching Jesus Christ or the Holy Ghost, or by cursing or contumeliously reproaching or exposing to contempt and ridicule, the holy word of God contained in the holy scriptures shall be punished by imprisonment in jail for not more than one year or by a fine of not more than three hundred dollars, and may also be bound to good behaviour
নরওয়েতে ব্লাসফেমি আইন
নরওয়েতেও ধর্ম অবমাননা একটি অপরাধ। ব্লাসফেমি ল’ একটি সাংবিধানিক আইন। যেমন প্যানেল কোড সেকশন- ১৪২ এ উল্লেখ হয়েছে,
Any person who by word or deed publicly insults or in an offensive or injurious manner shows contempt for any creed whose practice is permitted in the realm or for the doctrines or worship of any religious community lawfully existing here, shall be liable to fines or to detention or imprisonment for a term not exceeding six months.
“কোনো ব্যক্তি যদি জনসম্মুখে ন্যাক্কারজনক বা প্রতিঘাতমূলক এমন কোনো আচরণ করে যা রাষ্ট্র অনুমোদিত কোনো ধর্মমত, মতাদর্শ কিংবা এখানকার আইনানুগ কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কোনো ইবাদাতকে অবমাননা করে, তাহলে তাকে আইনানুগভাবে দণ্ডিত বলে গ্রেফতার করে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হবে।”
আয়ারল্যান্ডে ব্লাসফেমি আইন
২০০৯ সালে আআয়ারল্যান্ডে ব্লাসফেমি ল’ অত্যধিক পরিচিত হয়ে ওঠে। আয়ারল্যান্ড আইন আর্টিকেল ৪০ এ ধর্ম অনুভূতির স্বাধীনতা রক্ষার কথা বলা হয়েছে। তা সত্তে¡ও ধর্ম নিয়ে বিদ্রূপের কোন সুযোগ সেখানে নেই। যেমন: সেখানে উল্লেখ হয়েছে,
The publication or utterance of blasphemous, seditious, or indecent matter is an offence which shall be punishable in accordance with law.”
“কটুক্তিমূলক, রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কিংবা অশ্লীল কোনো কিছু বলা বা প্রকাশ করা রাষ্ট্রীয় আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
ডিফেমেশন অ্যাক্ট ২০০৯ অনুযায়ী যদি কোন ব্যক্তি কটূক্তি করে, তাহলে ১৩৬ নং ধারা অনুযায়ী তার শাস্তি নিম্নরূপ:
A person who publishes or utters blasphemous matter shall be guilty of an offence and shall be liable upon conviction On indictment to a fine not exceeding 25,000/.
“কোনো ব্যক্তি যদি অবমাননাকর কোনো কিছু বলে বা প্রকাশ করে, তাহলে তার সর্বোচ্চ ২৫ হাজার পাউন্ড অর্থদণ্ড হবে।
মুক্ত চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা
এক ব্যক্তি সবার কাছে বলে বেড়ায় যারা ধনী তারা অবৈধভাবে তাদের সম্পদ গড়ে তুলেছে, এখন তাদের সম্পদ ডাকাতির মাধ্যমে ছিনিয়ে নিতে হবে। মত প্রকাশের অধিকার সবার আছে।
এখন উপরের ব্যক্তিটি সব ধনীকে গণহারে অবৈধ সম্পদের মালিক বলেছেন এর ভিত্তি কি? এখানেই মত প্রকাশের স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা। মত প্রকাশের স্বাধীনতার একটা বেড়া আছে যা অতিক্রম করা যাবে না। যাচ্ছে তাই কোন কিছু বলে ফেললেই মত প্রকাশের স্বাধীনতা হবে না।
মত প্রকাশের স্বাধীনতা, আর ধর্ম অবমাননা এক বিষয় নয়। আমার মত প্রকাশ করতে গিয়ে যদি অন্য ধর্মের কাউকে আঘাত করা হয় নিশ্চয়ই তা অপরাধ। মুক্তচিন্তা বা বাকস্বাধীনতার একটা সীমারেখা আছে। অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও মতপ্রকাশ ও বাকস্বাধীনতাকে শর্তহীন, বল্গাহীন করে রাখা হয়নি। বিভিন্ন সীমারেখা দিয়ে একে শর্তযুক্ত করা হয়েছে। যেমন: বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ নং অনুচ্ছেদের ২নং দফায় আছে:
(ক) প্রত্যেক নাগরিকের বলার ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হলো।
‘তবে শর্ত হলো, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা, নৈতিকতা রক্ষার স্বার্থে বা আদালত অবমাননা, মানহানি বা কোনো অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা দিতে পারে- এসব ক্ষেত্রে উক্ত অধিকারগুলোর ওপর আইন অনুসারে যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ আরোপ করা যাবে।’
ব্রিটেনের কয়েকটি আইনে হেইট স্পিচকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ব্রিটেনের পাবলিক অর্ডার আইন-১৯৮৬, রেসিয়াল অ্যান্ড রিলিজিয়াস হেটরেড অ্যাক্ট-২০০৬ এবং ক্রিমিনাল জাস্টিস অ্যান্ড ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট-২০০৮ অনুযায়ী— কোনো ব্যক্তির বর্ণ, জাতি, অক্ষমতা, জাতীয়তা (নাগরিকত্বসহ), নৃতাত্ত্বিক অথবা জাতিগত ব্যুৎপত্তি, ধর্ম, অথবা লিঙ্গকে উদ্দেশ্য করে প্রকাশিত যেকোনো ঘৃণামূলক উক্তিই নিষিদ্ধ (forbidden)।
বিশেষত, ব্রিটেনের পাবলিক অর্ডার অ্যাক্ট ১৯৮৬-এর ২৯ (খ) ধারা অনুসারে কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা ধর্মকে উদ্দেশ্য করে বিদ্বেষপ্রসূত ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়াকে অফেন্স বা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।
এছাড়া আমেরিকার সুপ্রীম কোর্টও মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা আরোপ করে রেখেছে। আমেরিকার ইলিনোইস রাজ্যে ‘হেইট স্পিচে’র বিরুদ্ধে একটা আইন আছে। আইনটির মূল মর্ম হলো:
“An Illinois law making it illegal to publish or exhibit any writing or picture portraying the ‘depravity, criminality, unchastity, or lack of virtue of a class of citizens of any race, color, creed or religion’ was constitutional.”
বিবিসি’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ”ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মত কোন কথা যদি লেখায় থাকে, অবশ্যই আমাদের তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা খুব স্বাভাবিক। আমি একজন মুসলমান। এখন নবী করিম সা: সম্পর্কে কেউ যদি আজেবাজে কথা লেখে, আমরাতো চুপ করে বসে থাকতে পারি না। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
“কেউ হয়তো ধর্ম না মানতে পারে, তার মানে এই না যে তারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কথা বলবে বা নোংরা কথা লিখবে।”
সেসময় তিনি মন্তব্য করেছিলেন বাংলাদেশে সব ধর্মের সমান অধিকার আছে। কোন ধর্মের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেবার অধিকার কারও নেই।
বর্তমান বাংলাদেশে আলাদাভাবে ‘ব্লাসফেমি আইন’ করার পরিবর্তে বরং পেনাল কোডের এই ধারাগুলোর সময়োপযোগী সংস্কার করা যেতে পারে। সাম্প্রতিককালে ধর্মাবমাননার তীব্রতা বিবেচনায় শাস্তির পরিমাণ বাড়িয়ে আইনটিকে আরো কঠোর করা যেতে পারে।
ধর্ম অবমাননায় ইসলাম কি বলে
বস্তুতপক্ষে পবিত্র কুরআনে ধর্ম অবমাননা বা ব্লাসফেমি আইনের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেনঃ “নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে লানত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অপমানজনক আযাব।” (সূরা আল আহযাবঃ ৫৭)
এ আয়াতের মাঝে সুস্পষ্ট ঘোষণা করা হচ্ছে, আল্লাহ ও তাঁর রসূল সাঃ এর বিরুদ্ধে কেউ অন্যায় আচরণ করলে তার শাস্তি কখনো মানুষের ওপর বর্তায় না বরং আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং দুনিয়া এবং আখেরাতে শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন।
আবার ইসলাম বিদ্বেষীদের তীর্যক ব্যাঙ্গ আচরণের কারণে মহানবী সাঃ কে মহান আল্লাহ অভয় দিচ্ছেন এভাবে, মহান আল্লাহ্ বলেনঃ “আর আমি নিশ্চয় জানি তাদের কথায় তোমার অন্তর সংকুচিত হয়’ সুতরাং তুমি আপন রবের প্রশংসা দ্বারা তসবিহ পাঠ কর এবং সিজদাকারীদের অন্তর্গত হও”। (সূরা আল্ হিজ্বরঃ ৯৭,৯৮)
অর্থ্যাৎ মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কেউ কটাক্ষ-বানে জর্জরিত করলে বা তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গ আচরণের কারণে তাঁকে আল্লাহর প্রতি গভীর মনোযোগ দিতে এবং তাঁর প্রশংসা করতে বলা হয়েছে। কোনোভাবেই অপরাধীকে পাকড়াও করতে বলা হয়নি।
সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল মহানবী (সা.) এর বিরুদ্ধে কাফেররা যেসব আজে বাজে কথা বলতো এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহতায়ালা আদেশ দিয়ে মুহাম্মদ সাঃ এর মাধ্যমে এরশাদ করেনঃ “হে লোক সকল অন্যরা যা বলে এবং করে তাতে তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর এবং ধৈর্য্য সহকারে এগুলোকে পরিহার কর এবং উত্তম আচরণ দেখাও”। (সুরা মুযাম্মেলঃ ১০)
পরিশেষে, মনে রাখতে হবে,মুক্তচিন্তা মানে যা খুশি তাই বলার স্বাধীনতা নয়,অপরের বিশ্বাসে আঘাত হানার নামও বাক স্বাধীনতা নয়। আবার, একটি রাষ্ট্রে ব্লাসফেমি আইন যেন কোনোভাবেই নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে হিসেবে ব্যবহৃত হতে না পারে,অথবা প্রকৃতার্থেই মুক্তচিন্তার পথকে রুদ্ধ করতে না পারে তার নিশ্চয়তা বিধান করা প্রতিটি গণতান্ত্রিক সরকারের দায়িত্ব।
লেখক: ফাইজুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
রেফারেন্স: BBC, 4th November, 2018; Constitution of Ireland, GOVERNMENT PUBLICATIONS SALE1 OFFICE SUN ALLIANCE HOUSE, MOLESWORTH STREET, DUBLIN II, P 160 http://www.taoiseach.gov.ie/eng/ Historical_ Information/The_Constitution/February_2015_-_Constitution_of_ Ireland_.pdf); Archieves of Marry Land Online (Retrieved on March 28, 2017) http://msa.maryland.gov/megafile/msa/speccol/sc2900/sc2908/000001/000388/pdf/am388–824.pdf ); Talia Naamat, Nina Osin, Dina Porat, Legislating for Equality: A Multinational Collection of Non-Discrimination, Martinus Nijhoff Publishers, Leiden, Netherlands, 2012, P 191.); Bangladesh Constitution; Penal code, 1860.