প্রকাশ্যে ধূমপান ও যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ
হাইকোর্ট

সাত দিনের মধ্যে পরিবেশ দূষণকারী ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশের নির্দেশ

পরিবেশ দূষণকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ নিয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আগামী সাত দিনের মধ্যে পরিবেশ দূষণকারীদের নাম প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ সোমবার (১৩ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

রুলে দূষণকারীদের নাম প্রকাশে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না এবং নাম প্রকাশে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে পরিবেশ ও তথ্য সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সাতজনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আর অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে পরিবেশ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করে দুই সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নাসিম ইসলাম রাজু।

জানা গেছে, শিল্প মালিকদের আপত্তির কারণেই দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করছে না পরিবেশ অধিদপ্তর। আগে নাম উল্লেখ করা হলেও তাতে মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে আপত্তি জানান বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকরা। তাদের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতেই দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয় অধিদপ্তর। তবে মহাপরিচালক অথবা তার অনুমতি সাপেক্ষে অন্য কর্মকর্তারা দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করতে পারবেন বলেও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মৌখিক নির্দেশে সদস্যদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ সিদ্ধান্ত নেন। বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, প্রেস রিলিজ, ওয়েবসাইটের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম প্রকাশ করা যাবে না। এ নির্দেশ জেলা পর্যায়ের কার্যালয়গুলোকেও জানিয়ে দেয়া হয়। তবে বৈঠকে এ বিষয়ে কোনো লিখিত সিদ্ধান্ত হয়নি। যেহেতু সমন্বিত উদ্যোগে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তাই লিখিত আদেশের মতোই মেনে চলা হচ্ছে।

পরিবেশ দূষণের দায়ে ২০১৯ সালে মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় অবস্থিত তিনটি রেডিমিক্স কারখানাকে ২ লাখ করে মোট ৬ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। সে সময় সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, মাইশা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, এবিসি বিল্ডিং প্রডাক্টস এবং করিম এক্সপোর্ট অ্যান্ড রেডিমিক্স লিমিটেডকে এ জরিমানা করা হয়েছে।

এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রতিক্রিয়া দেখান বড় শিল্প মালিকরা। তাদের অভিযোগ, এভাবে দূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করলে প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট হয়। তাই মান বাঁচাতে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান তারা।

বিষয়টি আমলে নিয়ে দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ না করার মৌখিক সিদ্ধান্ত নেয় পরিবেশ অধিদপ্তর।

এরপর গত ১৩ এপ্রিল পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট শাখা ঢাকা ও গাজীপুরে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৩ লাখ টাকা জরিমানা করে। অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ও জরিমানার অংক উল্লেখ থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম প্রকাশ করা হয়নি।

এর আগে ৭ এপ্রিল শব্দ দূষণের দায়ে একটি হাসপাতালকে ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ধার্য করলেও হাসপাতালটির নাম ওয়েবসাইটে দেয়া হয়নি। এমনকি কিছুদিন ধরে পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট শাখা থেকে প্রকাশিত প্রেস রিলিজ ও খবরে কোনো প্রতিষ্ঠানের নামই উল্লেখ করা হচ্ছে না।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিবেশ দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম প্রকাশ করবে না-এমন সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে প্রকাশের পর হাইকোর্টে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে রিট করা হয়।

রিট আবেদনের পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, তথ্য অধিকার আইনের ৬ (১) এবং পরিবেশ আইনের ৪(২) (চ) বিধান অনুসারে কর্তৃপক্ষ দূষণকারীদের সকল তথ্য প্রকাশ করতে আইনগতভাবে বাধ্য। কিন্তু অধিদপ্তর আইনকে অমান্য করে দূষণকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনি।