সরকারি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে নিয়োগপত্র সবাই ভুয়া, কিন্তু হাইকোর্টে রিট করে দিব্যি নিজেদের পক্ষে রায়ও পেয়ে যায় ৩৪ আবেদনকারী। তবে সরকারি কর্মদিবসে নিয়োগ পরীক্ষা, আর কাজে যোগদানের তারিখ ছিল সরকারি বন্ধের দিন। ব্যস! বড়সড় এই জালিয়াতিতে সফল হতে বাধা হয়ে দাঁড়াল তারিখ অসঙ্গতি।
বিষয়টি মঙ্গলবার (১৪ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবির লিটনের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চের নজরে আনা হলে রিট আবেদনকারী ৩৪ জনসহ এ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা যায়, ২০১২ সালের ৫ মে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব বিভাগ থেকে অফিস সহকারী, এমএলএসএস ও নৈশপ্রহরী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি দেখানো হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি স্মারক নম্বরসহ এমনভাবে তৈরি করা হয়, সেটি যে জাল তা সাধারণভাবে কেউ ধরতেও পারবে না।
এরপর আবেদনকারী ৩৪ জনের প্রত্যেকের নামে প্রবেশপত্র তৈরি করা হয়। ২০১৩ সালের ২০ জানুয়ারি পৃথক দুটি অফিস আদেশ জারি করে এই ৩৪ জনকে নিয়োগও দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১৬ জন অফিস সহকারী এবং ১৮ জন এমএলএসএস ও নৈশপ্রহরী পদে।
অফিস সহকারী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন- আব্বাস উদ্দিন, মাকসুদা, এটিএম শাহ ফালাল, নজরুল ইসলাম, সোনিয়া আক্তার, মানিক মিয়া, শারমিন, মিজানুর রহমান, কেএম মাসুম বিল্লাহ, নাজমুল আহসান, শারমিন জাহান, আব্দুল মান্নান, ইসরাত জাহান বিথি, মোহাম্মদ হান্নান শাহ, সুলতানা ও বেল্লাল হোসেন। ভুয়া ওই নিয়োগপত্রে তাদের ২০১৩ সালের ২৩ মার্চের মধ্যে অফিসে যোগদান করতে বলা হয়।
আর নৈশপ্রহরী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন- বনি আমিন, মাসুম বিল্লাহ, কাসেম মিয়া, বেল্লাল চৌকিদার, সিদ্দিকুর রহমান ও শহিদুল ইসলাম। এমএলএসএস পদে নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন- শহিদুল ইসলাম, খাদিজা বেগম, আরিফুর রহমান, নিজাম, ফারজানা আক্তার, ইব্রাহিম, শাহীন, আরিফুর রহমান, জসিম উদ্দিন, বেল্লাল, জুয়েল ও উজ্জ্বল গাজী। ভুয়া ওই নিয়োগপত্রে তাদেরকেও ২৩ মার্চের মধ্যে যোগদান করতে বলা হয়।
পরে ওই ৩৪ জন ডিসি অফিসে একটি চিঠি লিখে তাতে লিখিত নিয়োগপত্র দেওয়ার দাবি জানান। কিন্তু তা না পেয়ে এসব কাগজপত্র দিয়ে আবেদনকারীরা বাদী হয়ে হাইকোর্টে ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রিট করেন।
হাইকোর্ট ওই আবেদনের ভিত্তিতে তাদের পক্ষে একটি রায়ও দেন। তবে রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় আদালত অবমাননার মামলা করেন রিট আবেদনকারীরা।
এর মধ্যে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন করতে গেলে বরগুনার জেলা প্রশাসন দেখতে পায়, ওই নিযোগ বিজ্ঞপ্তি, নিয়োগপত্রসহ সবই ভুয়া। পরে এসব ভুয়া তথ্য ও জালজালিয়াতির আশ্রয়ের বিষয়টি বরগুনার জেলা প্রশাসক হাইকোর্টের কাছে তুলে ধরেন।
এরপর আদালত রিট আবেদনকারী ৩৪ জনসহ এ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বরগুনার ডিসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালতে ডিসির পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মো. মোজাম্মেল হক। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী নুর মোহাম্মদ তালুকদার।
আদেশের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিহসচিত করেছেন ব্যারিস্টার মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ‘সব কাগজপত্র এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, সেটা যে জাল তা হঠাৎ করে কেউ বুঝতেই পারবে না। তবে ওই নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ছিল একটি কর্মদিবসে, সাধারণত সরকারি চাকরির পরীক্ষা হয় বন্ধের দিনে।’
ব্যারিস্টার মোজাম্মেল হক আরো বলেন, ‘আবার নিয়োগপত্রে যোগদানের যে তারিখ উল্লেখ করা হয়, সেটা ছিল বন্ধের দিনে। এভাবে নানা অসঙ্গতি থেকে জাল-জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। হাইকোর্ট আবেদনকারী ৩৪ জনসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ডিসিকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।’