মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে নিয়ে বিজেপির নেতাদের কটূক্তির জের ধরে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তার জেরে পুলিশ ওই অঞ্চলে সাধারণ মানুষকে হেনস্তা করছে বলে একটি পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশন কলকাতা হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছিল।
আইনজীবীদের বক্তব্য ছিল, সব স্তরের সাধারণ মানুষ নয়, বেছে বেছে মুসলমান সমাজের যুবকদের হেনস্তা করা হচ্ছিল। সেই আবেদনের ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে তাদের বক্তব্য জানাতে বলেছেন।
আজ বুধবার (১৫ জুন) মামলাটির ওপর আবার শুনানি হবে।
আবেদনকারী আইনজীবী মাসুম আলী সর্দারের পক্ষে তাঁর আইনজীবী ঝুমা সেন আদালতকে জানান, সম্পূর্ণ খেয়ালখুশিমতো দেশের নাগরিকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, আটক করা হচ্ছে। যে কারণে ওই অঞ্চলে (হাওড়ার পাঁচলা ও উলুবেড়িয়া অঞ্চলে) আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ বেছে বেছে মুসলমানপ্রধান অঞ্চলে ঢুকে যুবকদের বেধড়ক পেটাচ্ছে ও গ্রেপ্তার করছে—আইনজীবীরা বিচারপতিদের সেটিও জানান।
তবে ইতিমধ্যে হাইকোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ এই বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজ্য সরকারকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে। রাজ্য সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে না পারলে, প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য সরকারের অ্যাডভোকেট জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য। বলা হয়েছে, ভিডিও চিত্র দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
আবেদনকারীরা তাঁদের পিটিশনে বলেছিলেন, ১০ জুন ইসলাম ধর্মীয় কিছু সংগঠন একটি শান্তি মিছিল বের করেছিল। কিন্তু সেই মিছিলে ঢুকে কিছু মানুষ জয় শ্রীরাম স্লোগান দিতে শুরু করে। এর উদ্দেশ্য ছিল, মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের প্ররোচিত করা। এমন দাবি আবেদনকারীদের।
হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে এই ঘটনা তদন্ত করানোর আবেদন জানানো হয়। পাশাপাশি আইনজীবী ঝুমা সেন তাঁর আবেদনে ইন্টারনেট বন্ধ থাকা ও এলাকায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারা (জমায়েত করার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক আদেশ) জারির কারণে সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
এদিকে কলকাতা পুলিশের তরফে সোমবার একটি প্রশাসনিক আদেশ মহানবীর (সা.) নামে কটূক্তি করার জন্য বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে সমন জারি করে উত্তর কলকাতার একটি থানায় ২০ জুন ডেকে পাঠানো হয়েছে। আবেদনকারীরাও ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় নূপুর শর্মার নামে মামলা করার অনুমতি চেয়েছেন।
মামলাটি শুনানির জন্য কলকাতা হাইকোর্টে গৃহীত হওয়াকে রাজ্যের শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করছেন আইনজীবীরা।
সূত্র: প্রথম আলো