ভারতের উত্তর প্রদেশে বিক্ষোভকারীদের ঘরবাড়ি বুলডোজার চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে রাজ্য সরকারকে নোটিশ ইস্যু করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। খবর এনডিটিভির।
আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) উত্তর প্রদেশ সরকারকে এই নোটিশ ইস্যু করেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
দেশটির সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি আইন অনুযায়ী হতে হবে। তা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হতে পারে না।
ভারতের সর্বোচ্চ আদালত অবশ্য উত্তর প্রদেশ সরকারকে ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া বন্ধের নির্দেশ দেননি। আদালত বলেছেন, তাঁরা ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া স্থগিত করতে পারেন না। বরং তাঁরা রাজ্য সরকারকে আইন অনুযায়ী চলতে বলতে পারেন।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের প্রতিবাদে সম্প্রতি উত্তর প্রদেশে বিক্ষোভ হয়। এই বিক্ষোভ একপর্যায়ে সহিংস রূপ নেয়। সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে মুসলমান জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি বুলডোজার চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে উত্তর প্রদেশের বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সরকার।
উত্তর প্রদেশে মুসলমান জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যোগী সরকারের বুলডোজার নীতির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ।
জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ উত্তর প্রদেশে বিক্ষোভ মোকাবিলায় সম্পত্তি নষ্টের অভিযান বন্ধে সুপ্রিম কোর্টে আরজি জানায়। উত্তর প্রদেশে অবৈধভাবে বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায় তারা।
আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে যাতে কারও ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া না হয়, তা নিশ্চিত করতে উত্তর প্রদেশ সরকারকে নির্দেশ দিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রতি আবেদন জানায় জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ।
তবে উত্তর প্রদেশ সরকারের দাবি, তারা আইন অনুসরণ করেই কাজ করছে।
বুলডোজার নীতি বন্ধে আইনজীবী ও সাবেক বিচারপতিদের আরজি
ভারতের উত্তর প্রদেশ সরকারের ‘বুলডোজার নীতি’ বন্ধে অবিলম্বে হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানালেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতিরা। একই অনুরোধে শামিল হয়েছেন বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট আইনজীবী।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনাকে লেখা এক চিঠিতে গত মঙ্গলবার (১৪ জুন) এ অনুরোধ জানান বিচারক ও আইনজীবীরা।
চিঠিতে তাঁরা বলেছেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের প্রতিবাদে উত্তর প্রদেশে বিক্ষোভকারীদের ঘরবাড়ি বুলডোজার চালিয়ে যেভাবে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে, যেভাবে ধরপাকড় করা হচ্ছে, তা আইনের শাসনের পরিপন্থী। এই নৃশংসতা দেশের সংবিধানকে হাস্যকর করে তুলেছে। অথচ এই সংবিধানই নাগরিকদের মৌলিক অধিকার দিয়েছে।
সাবেক বিচারপতি ও আইনজীবীরা ওই চিঠিতে লিখেছেন, বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশি হেফাজতে তরুণদের ওপর অমানুষিক অত্যাচার করা হচ্ছে। বিনা নোটিশে বিক্ষোভকারীদের ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। বেছে বেছে মুসলমানদের অত্যাচারের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। শাসক দলের এই অত্যাচার দেশের বিবেক নাড়িয়ে দিয়েছে। এই নৃশংসতা আইনের শাসনের অবমাননা ও দেশের সংবিধানকে হাস্যকর করে তুলেছে।
উত্তর প্রদেশের সরকারের বিক্ষোভ দমানোর নীতির বিষয়ে বিশিষ্টজনেরা আরও লিখেছেন, মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন, এমন শিক্ষা দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ বিক্ষোভে শামিল না হয়। আইন যাতে হাতে তুলে না নেয়। তিনি এমন কথাও বলেছেন, ১৯৮০ সালের জাতীয় নিরাপত্তা আইন, ১৯৮৬ সালের উত্তর প্রদেশ দুর্বৃত্ত ও অসামাজিক কাজকর্ম বন্ধের আইনে বিক্ষোভকারীদের বন্দী করা হোক। এর ফলে তিন শতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ও সম্পত্তিনাশের নামে গোটা রাজ্যে যা হচ্ছে, তা বিচারবহির্ভূত শাস্তি।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে তাঁরা বলেছেন, সাম্প্রতিককালে একাধিকবার সর্বোচ্চ আদালত স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এগিয়ে এসে মানুষের অধিকার রক্ষা করেছেন। করোনাকালে শ্রমিকদের রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন। তেমনই এবারও এগিয়ে আসুন।
যে ১২ জন প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছেন
যারা প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন- সুপ্রিম কোর্টের তিনজন সাবেক বিচারপতি বি সুদর্শন রেড্ডি, ভি গোপাল গৌড় এবং এ কে গঙ্গোপাধ্যায়। আছেন দিল্লি হাইকোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং আইন কমিশনের সাবেক চেয়ারপারসন এ পি শাহ, মাদ্রাজ হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি কে চন্দ্রু এবং কর্ণাটক হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি মহম্মদ আনোয়ার।
এছাড়াও আছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শান্তি ভূষণ, ইন্দিরা জয়সিং, চন্দ্র উদয় সিং, প্রশান্ত ভূষণ, আনন্দ গ্রোভার ও মাদ্রাজ হাইকোর্টের আইনজীবী শ্রীরাম পঞ্চু।
বুলডোজার নীতির প্রবক্তা যোগী আদিত্যনাথ
উত্তর প্রদেশের বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বুলডোজার নীতির প্রবক্তা। নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে বিক্ষোভ দমাতে এবং গুন্ডাদের বাগে আনতে তিনি প্রায়ই বুলডোজার চালিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সম্পত্তি নষ্ট করেন। পরবর্তী সময়ে এই নীতি ছড়িয়ে পড়ে দেশের অন্যান্য বিজেপিশাসিত রাজ্যে। মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখন্ড, কর্ণাটক, গুজরাটেও প্রশাসন বুলডোজারের ব্যবহারের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শায়েস্তা করতে চেয়েছে। দিল্লিতেও বিজেপিশাসিত পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এটা করেছে।
সূত্র: প্রথম আলো