শতাধিক ‘ধর্ম ব্যবসায়ীর’ সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনের তদন্ত চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তালিকা জমা দিয়েছে নাগরিকদের প্ল্যাটফর্ম মৌলবাদী ও সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন। দুদক গণকমিশনের অভিযোগ আমলে নিয়েছে।
ইতোমধ্যে অভিযোগ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের অনুসন্ধানকারী দল গঠন করা হয়েছে। এ–সংক্রান্ত একটি দাপ্তরিক চিঠি গত মঙ্গলবার (২১ জুন) তিন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়। দুদকের পরিচালক উত্তম কুমার মণ্ডল এ চিঠি পাঠান।
দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে অনুসন্ধানের জন্য নিযুক্ত অন্য দুই কর্মকর্তা হলেন- দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহীম ও উপপরিচালক মো. আহসানুল কবীর।
চিঠিতে বলা হয়, ‘….গঠিত তিন সদস্যবিশিষ্ট টিমের মাধ্যমে বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত শাখা হতে অনুসন্ধানের সদয় অনুমোদন ও অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) বরাবর প্রেরণের জন্য কমিশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।’
চিঠির সঙ্গে ২ হাজার ২১৫ পাতার ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন’-এর তিন খণ্ড কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিদের উদ্যোগে ‘মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গঠিত গণকমিশন’ ১১৬ আলেম ও ইসলামি বক্তার একটি তালিকা গত ১১ মে দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা দেয়।
তালিকায় স্থান পাওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়ন এবং ওয়াজের মাধ্যমে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করা ও ধর্মের নামে ব্যবসার অভিযোগ আনে গণকমিশন। তারা ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন’ শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রকাশ করে।
দুদকের দাপ্তরিক চিঠিতে দেখা যায়, ১২ মে দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ অভিযোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহাপরিচালক (দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেলে) পাঠান। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
এ বিষয়ে দুদকের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দুদকের চেয়ারম্যান, একাধিক কমিশনার ও সচিবের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গণকমিশনের শ্বেতপত্র নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে ২১ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, গণকমিশনের আইনি কোনো ভিত্তি নেই।
গণকমিশনের এই তালিকা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যাঁদের নামে তাঁরা দুর্নীতির দায় দিচ্ছেন, এগুলো আমরা তদন্ত করিনি। দেখিও নাই। কাজেই এগুলো না দেখে বলতে পারব না। যে অভিযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ হবে না, সেই অভিযোগ কখনো আমলে নেওয়া হবে না।’
এর দুই দিন পর ২৩ মে ১১ জন আলেম একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্ত কমিশন গণকমিশনের অর্থের উৎস এবং দুটি সংগঠনের সদস্যদের সম্পদের অনুসন্ধানের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে স্মারকলিপি দেন। দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন এই স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।
স্মারকলিপিতে ১৯৯২ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আয়-ব্যয়ের হিসাব ও তহবিলের উৎস সম্পর্কে অনুসন্ধান এবং কমিটির নেতাদের নামে থাকা সম্পদের উৎস ও আয়-ব্যয়ের হিসাব সম্পর্কে অনুসন্ধান করারও অনুরোধ জানানো হয়।
একই সঙ্গে গণকমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, মাওলানা জিয়াউল হাসান, কমিশনের সদস্যসচিব তুরিন আফরোজ, সমন্বয়কারী কাজী মুকুল, সদস্য আসাদুজ্জামান বাবু, নাদিয়া চৌধুরী, আবু সালেহ রনি, মাওলানা রফিক হাসান, সৈয়দ নুর আলম, শেখ আলী শাহ নেওয়াজসহ কমিশনের সঙ্গে যুক্ত অন্যদের সম্পদের উৎস, ব্যাংক হিসাব, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ সম্পর্কে অনুসন্ধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সূত্র: প্রথম আলো