১ হাজার ৭০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাজা হয়েছিলো চার মাসের। বিশেষ আদালতের দেওয়া এই সাজার বিরুদ্ধে ১৯৭৩ সালে হাইকোর্টে আপিল করা হয়। পান জামিন। কিন্তু জামিন পেয়ে আর আদালতমুখী হননি ইউপি চেয়ারম্যান জয়নুদ্দিন সরকার।
ফলে গত ৪৯ বছর ধরে তার সেই আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় পড়ে আছে হাইকোর্টে। আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় পড়ে থাকলেও খোঁজ নেই আপিলকারীর। আপিলকারীর খোঁজ না পাওয়ায় বিলম্ব হচ্ছে আপিল নিষ্পত্তিতে। তবে তাকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা চলছে।
১৯৬৫ সালে রাজশাহীর সারদা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ছিলেন জয়নুদ্দিন সরকার। ইউপি চেয়ারম্যানের পাশাপাশি তিনি ঝিকরি মডেল প্রাইমারি স্কুল কনস্ট্রাকশন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালন কালে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ১৯৬৫ সালের ৬ মার্চ হতে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার থেকে ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ পান। কিন্তু ঐ অর্থের মধ্য থেকে ১ হাজার ৭০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা করে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো।
ঐ মামলায় ১৯৭৩ সালের ২৫ আগস্ট জয়নুদ্দিন সরকারকে চার মাসের দণ্ড দেয় রাজশাহীর বিশেষ জজ আদালত। দণ্ডের পাশাপাশি তাকে ২ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো দুই মাসের সাজা দেওয়া হয়। রায় ঘোষণার পরই তাকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে পাঠানো হয় কারাগারে।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ঐ বছরই হাইকোর্টে আপিল করেন দণ্ডিত এই চেয়ারম্যান। চান জামিন। হাইকোর্ট চেয়ারম্যানকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয়। পরবর্তীকালে বাড়ানো হয় জামিনের মেয়াদ। কিন্তু সাজার রায়ের বিরুদ্ধে যে আপিল করা হয় উচ্চ আদালতে সেখানে তৎকালীন দুনীর্তি দমন ব্যুরোকে পক্ষভুক্ত করেননি চেয়ারম্যান। ফলে আপিলটি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পড়ে ছিল চার যুগ ধরে।
পরে ২০২১ সালে বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চে আপিলটি শুনানির জন্য অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু আপিল শুনানির জন্য আপিলকারীর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহীর জেলা জজ আদালত থেকে হাইকোর্টে পাঠানো চিঠিতে অনুসন্ধান কমিটি বলেছে, ১৯৬৭-৭৬ সালের দুটি রেজিস্ট্রার পর্যালোচনায় আসামি জয়নুদ্দিন সরকার সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে অনুসন্ধান অব্যাহত আছে।
এদিকে হাইকোর্টের আদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ বিষয়ে কাজ করছে বলে জানালেন কমিশনের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট আসিফ হাসান। তিনি বলেন, আমি কমিশনকে চিঠি লিখেছি আপিলকারীর বিষয়ে তথ্য আনার জন্য। কারণ আপিলকারীকে না পাওয়ায় বিলম্বিত হচ্ছে আপিল শুনানি।
দুদকের এই আইনজীবী আরো বলেন, আপিল করা হলেও তাতে দুদককে পক্ষভুক্ত করা হয়নি। যদি আগেই দুদককে পক্ষভুক্ত করত তাহলে আপিলটি এতদিন শাখায় পড়ে থাকত না।
সূত্র: ইত্তেফাক