ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির সাময়িক বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার করা এক পিটিশনের শুনানিতে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট কিছু মন্তব্য করেছেন।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে নূপুর শর্মার অবমাননাকর বক্তব্য এবং পরবর্তীকালে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে গতকাল শুক্রবার (১ জুলাই) ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট এসব মন্তব্য করে। খবর এনডিটিভির।
মন্তব্যগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি নিচে তুলে দেওয়া হলো-
(১) নূপুর শর্মার মন্তব্য ঘিরে করা অভিযোগগুলো (এফআইআর) দিল্লিতে স্থানান্তরের আবেদন জানান তাঁর আইনজীবী। তিনি বলেন, নূপুর শর্মা হুমকির মুখে রয়েছেন এবং কোথাও যাতায়াত তাঁর জন্য এখন নিরাপদ নয়।
জবাবে বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, তিনি হুমকির মুখে রয়েছেন নাকি নিজেই নিরাপত্তা–হুমকি হয়ে উঠেছেন? যেভাবে তিনি দেশজুড়ে (ধর্মীয়) আবেগ উসকে দিয়েছেন, দেশে যা কিছু ঘটছে, তার জন্য এই নারী একাই দায়ী।
(২) বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘কীভাবে তিনি (নূপুর শর্মা) বিতর্ক উসকে দিয়েছেন, আমরা দেখেছি। কিন্তু যেভাবে তিনি পুরো বিষয়টি বললেন এবং পরবর্তীকালে নিজেকে আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দিলেন, তা লজ্জাজনক। তাঁর উচিত গোটা জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া।’
(৩) দিল্লি পুলিশ ও বিতর্ক আয়োজনকারী টেলিভিশন চ্যানেলের প্রসঙ্গ টেনে সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘দিল্লি পুলিশ কী ভূমিকা পালন করেছে? আমাদের মুখ খুলতে বাধ্য করবেন না; কী নিয়ে টেলিভিশন বিতর্কের আয়োজন করা হয়েছিল? একটা ইস্যু উসকে দিতে? কেন তারা একটি বিচারাধীন বিষয়কে বিতর্কের জন্য নির্ধারণ করেছিল?’
(৪) সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। ক্ষমতাসীনদের ইঙ্গিত করে সর্বোচ্চ আদালত বলেন, ‘যখন আপনারা অন্যদের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন, তাঁরা তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার হন। যখন সেটা আপনাদের বিরুদ্ধে হয়, তখন আর কেউ আপনাদের স্পর্শ করার সাহস পায় না।’
(৫) নূপুর শর্মার সমালোচনা করে সর্বোচ্চ আদালত আরও বলেছেন, নূপুর শর্মার মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তাঁর ‘একগুঁয়ে ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ’ প্রকাশ পেয়েছে।
বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, তিনি (নূপুর শর্মা) যদি একটি দলের মুখপাত্র হন, তাহলে যা হয়। তিনি ভেবেছেন, তাঁর প্রতি সরকারের সমর্থন রয়েছে এবং দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ছাড়াই তিনি যেকোনো বক্তব্য দিতে পারেন।
উল্লেখ্য, গত ২৬ মে এক টেলিভিশন বিতর্কে মহানবী (সা.) কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগ ওঠে নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে। বিজেপির দিল্লি শাখার গণমাধ্যম প্রধান নবীন কুমার জিন্দালও মহানবী সম্পর্কে টুইটারে অবমাননাকর মন্তব্য করেন।
বিজেপির এই দুই নেতার অবমাননাকর মন্তব্যে দেশ-বিদেশে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। ভারতজুড়ে বিক্ষোভ করে মুসলিমরা। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় আরব ও মুসলিম বিশ্ব। অন্তত ১৬টি দেশ থেকে এর তীব্র নিন্দা জানানো হয়। তুমুল সমালোচনার মুখে নূপুর শর্মাকে সাময়িক বরখাস্ত ও জিন্দালকে বহিষ্কার করে বিজেপি।
সূত্র: প্রথম আলো