ভুয়া দলিল সৃজন করে অর্পিত সম্পত্তি নামজারী করায় দুইজন দলিল লেখকসহ ৪ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছে হবিগঞ্জের একটি আদালত। একইসাথে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
হবিগঞ্জের লাখাই আমলী আদালত-৭ এর বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জাকির হোসাইন গত ২৯ জুন এ আদেশ দেন। আগামী ১৬ আগস্ট গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিলের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত।
চার আসামি হলেন- মোছাঃ সাবিনা আক্তার ও শ্রী চম্পা দাশ এবং দলিল লেখক ইব্রাহিম মিয়া ও মোঃ আব্দুল মান্নান।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার বাদী আদালতে হাজির হয়ে একটি সাদা স্ট্যাম্পে গত ১০/১২/২০০৩ইং তারিখে সম্পাদিত মর্মে অরেজিস্ট্রিকৃত এই মামলার তর্কিত ভূমির বিষয়ে একটি কাগজ দাখিল করেন।
অভিযোগকারী দাবি করেন তিনি উক্ত কাগজপত্রের আলোকে তর্কিত ভূমিতে দখলে আছেন। আসামীপক্ষ উক্ত ভূমি আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে জাল জালিয়াতি আশ্রয় গ্রহণপূর্বক একটি রেজিস্ট্রিকৃত কবলা সৃজন ও নামজারি সৃজন করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে।
এই মামলার বিস্তারিত তদন্ত শেষে সিআইডি, হবিগঞ্জ ভোলা কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, তর্কিত ভূমির মূল মালিক প্রকাশ চন্দ্র পাল ভারত চলে যান। তর্কিত ভূমি দখল করার উদ্দেশ্যে অভিযোগকারীর বড় ভাইয়ের স্ত্রী ১নং আসামী মোছাঃ সাবিনা আক্তার সহকারী কমিশনার (ভূমি), লাখাই এর নামজারি মোকদ্দমা নং ২২৭/১৮-১৯ মূলে নামজারি খতিয়ান নং ৩৩৪৮ হাসিল করেন।
পরবর্তীতে ২য় ঘটনার তারিখ ও সময়ে অর্থ্যাৎ ১১/০৩/২০২০ ইং তারিখ লাখাই-সাব রেজিস্ট্রি অফিসে উপস্থিত হয়ে ১নং আসামী দাতা হয়ে ও পুত্র ৬নং আসামীকে গ্রহীত করে একটি হেবা দলিল ৭৬১/২০২০ রেজিস্ট্রি করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দাবি করেন, নামজারি নথিতে দাখিলকৃত দলিল নং ১৮৭২/২০১২ এর সাথে প্রকৃত দলিলের কোন মিল নাই। এছাড়া তদন্তকালে আরো দেখা যায় যে, তর্কিত ভূমি অর্পিত সম্পত্তি হিসাবে আরএস খতিয়ান ১/১ হিসাবে রেকর্ড আছে।
তদন্ত প্রতিবেদনসহ নথি পর্যালোচনায় ও তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে নালিশা দরখাস্তে বর্ণিত অভিযুক্ত ১. মোছাঃ সাবিনা আক্তার, স্বামী মৃত সুলেমান মিয়া, সাং মোড়াকড়ি (পালপাড়া), ২. শ্রী চম্পা দাশ, পিতা মৃত যতিন্দ্র মোহন দাশ, সাং মোড়াকড়ি (দাসপাড়া), ৩. ইব্রাহিম মিয়া (দলিল লেখক), পিতামৃত মহরম আলী, সাং সিংহ্যাম, ৪. মোঃ আব্দুল মান্নান (দলিল লেখক), পিতামৃত ইউসুফ আলী, সাং মানপুর, সর্ব থানা লাখাই, হবিগঞ্জ দের বিরুদ্ধে পেনাল কোড, ১৮৬০ এর ৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৩৪ ধারার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা আছে মর্মে প্রতীয়মান হয়।
উক্ত বর্ণিত ধারায় প্রতিবেদন গ্রহণপূর্বক অপরাধ আমলে গ্রহণ করে বর্ণিত ধারায় অভিযুক্তদের নামে গ্রেফতারী পরোয়ানা (W/A) ইস্যু করা হোক।
অপরাপর অভিযুক্ত ৫. সানা উল্লাহ, ৬. মোঃ রনি মিয়া, ৭. আবু মুছা, ৮. নুর বখত মিয়া, ৯. সত্তার মিয়া, ১০. মুৎফুর রহমান ভুইয়া দলিল লেখক দের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা না থাকায় তাদেরকে অত্র মামলার দায় হতে অব্যাহতি প্রদান করেন।
এই মামলার সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, তর্কিত ভূমির মূল মালিক একজন হিন্দু ব্যক্তি হন এবং তিনি ভারত চলে যান। তর্কিত ভূমি অর্পিত সম্পত্তি হিসাবে ১/১ খতিয়ানের অন্তর্ভূক্ত। গত ০৭/০৬/২০২২ইং তারিখে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), হবিগঞ্জ কর্তৃক প্রেরিত প্রতিবেদন ও নামাজারি খতিয়ান পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ১নং আসামী সাবিনা আক্তারের নামে খতিয়ান নং ১/১ এর | রেফারেন্স-এ নামজারি নং ৭২৭/১৮-১৯ খতিয়ান খোলা হয় এবং | সহকারী কমিশনার (ভূমি), লাখাই স্বাক্ষরিত কাগজাত পর্যালোচনায় উক্ত বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়।
সার্বিক পর্যালোচনায় স্পষ্ট যে, তর্কিত ভূমি অর্পিত সম্পত্তি ও ১/১ খতিয়ান ভুক্ত হওয়ার পরও একটি ভুয়া দলিল উপস্থাপনপূর্বক কোন যথাযথ আইন ও তদন্ত অনুসরণ ব্যতীত ১নং আসামী সাবিনা আক্তারের নামে নামজারি খতিয়ান সৃজন করা হয়।
উক্ত বিষয়টির সাথে নামজারি খতিয়ানের সাথে সম্পৃক্ত সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী দের পারস্পরিক অবৈধ যোগযোগ ও সম্পর্ক প্রতীয়মান হয়। উক্ত বিষয়টি বিভাগীয় তদস্তুপূর্বক ফৌজদারী মামলা সহ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন মর্মে এই আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয়।
এমতাবস্থায়, ডেপুটি কমিশনার,হবিগঞ্জ কে আদেশে উল্লেখিত পর্যবেক্ষণের আলোকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) লাখাই এর কার্যালয়ের নামজারি মামলা নং ২২৭/১৮-১৯ এর বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত পূর্বক আইনানুগ পদক্ষেপ এবং ফৌজদারী অপরাধ প্রমাণ হলে নিয়মিত ফৌজদারী মামলা রুজুর নির্দেশ করেন বিচারক। সেই সাথে গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিলের জন্য আগামী ১৬ আগস্ট দিন ধার্য করেন আদালত।