ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ঘুষের ২৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকাসহ আটক কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি হুকুম দখল কার্যালয়ের (এলএ) শাখার সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানের (৪০) পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে আজ সোমবার (৪ জুলাই) জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
এদিন দুপুরে কক্সবাজারের বিশেষ জজ আদালতে দুপুরে আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদক কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন।
একই সময় সার্ভেয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদক থেকে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
দুদকের আইনজীবী আবদুর রহিম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মামলায় সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। বর্তমানে সার্ভেয়ার কক্সবাজার জেলা কারাগারে অবস্থান করলেও তাঁকে আদালতে হাজির রাখা হয়নি।
দুদকের আইনজীবী আবদুর রহিম বলেন, সার্ভেয়ার আতিকুর ঘুষের ২৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকা কোথায় পেয়েছেন, তার সঠিক ব্যাখ্যা বা উত্তর দিতে পারেননি। এখন রিমান্ডে এনে কার কাছ থেকে তিনি ওই টাকা নিয়েছেন, কীভাবে নিয়েছেন এবং ঘুষ ও কমিশন বাণিজ্যে জড়িত দালাল চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করা হবে।
মামলার বিষয়ে দুদক সমন্বিত কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২–এর বিভিন্ন ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ধারায় মামলাটি রুজু হয়েছে। সুবিধাজনক সময়ে সার্ভেয়ারকে রিমান্ডে নিয়ে জব্দ টাকার উৎস সম্পর্কে অনুসন্ধান করবে দুদক।
প্রসঙ্গত, সার্ভেয়ার আতিকুরের বাড়ি সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মীরপুর এলাকায়। তাঁর বাবার নাম আবদুর রহমান। আতিকুরের চাকরি পার্বত্য বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কাযালয়ে হলেও তিনি ( সার্ভেয়ার) সংযুক্তিতে দেড় বছর ধরে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের ভূমি হুকুম দখল (এলএ) শাখার অধীন মহেশখালী উপজেলার দায়িত্বে ছিলেন।
মহেশখালীতে সরকারের মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনসহ প্রায় ১৫টি প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন আতিকুরসহ তিন সার্ভেয়ার। ভূমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে জমির মালিকদের কাছ থেকে ঘুষ লেনদেনে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে আতিকুরের বিরুদ্ধে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ১ জুলাই সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে কক্সবাজার বিমানবন্দরের তল্লাশি গেট থেকে প্রবেশের সময় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সার্ভেয়ার আতিকের কাছে টাকা পাওয়া যাওয়ার বিষয়টি মুঠোফোনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজকে জানান। তিনি (এডিসি) তাৎক্ষণিক আতিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। কিন্তু ততক্ষণে সার্ভেয়ার আতিক ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়ায় তাঁকে আটকাতে পারেনি কক্সবাজার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
পরে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক করা হয় তাঁকে। সেখানে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি টাকার উৎস সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। পরে গোয়েন্দা সংস্থা সার্ভেয়ার আতিককে কক্সবাজারে ফেরত এনে জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্ভেয়ার আতিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
সেখানেও জিজ্ঞাসাবাদে সার্ভেয়ার আতিক টাকার উৎস সম্পর্কে সদুত্তর দিতে না পারায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে ১ জুলাই রাতে সার্ভেয়ারকে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়।
পরে ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ ডায়েরি করে সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালতের বিচারক সার্ভেয়ারকে ২ জুলাই জেলা কারাগারে পাঠান।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সার্ভেয়ার আতিক উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশ্যে হস্তান্তর, স্থানান্তরের চেষ্টা করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২–এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।