মোঃ করমুল্লাহ্: আজকে আলোচনা করব কোন ব্যক্তি ৭ বছর বা তার বেশি সময় ধরে নিখোঁজ হলে তাকে মৃত হিসেবে ঘোষণা করার প্রক্রিয়া। আমাদের দেশে কোন ব্যক্তি দীর্ঘ সময় ধরে নিখোঁজ হলে উক্ত ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করার জন্য সুনির্দিষ্ট কোন আইন বিদ্যমান নাই।
কিন্তু সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর ১০৮ ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি সম্পর্কে ৭ বৎসর যাবত কোন খবর পাওয়া যায়নি সে যে জীবিত আছে তা প্রমাণের দায়িত্বঃ তবে যখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোন ব্যক্তি জীবিত বা মৃত এবং প্রমাণিত হয়েছে যে, সেই ব্যক্তি জীবিত থাকলে স্বাভাবিকভাবে যারা তার সংবাদ পেত, তারা সাত বছর যাবত তার কোন সংবাদ পায়নি। তখন উক্ত ব্যক্তি জীবিত বলে যে দাবি করে, এটা প্রমাণ করার দায়িত্ব তার উপর ন্যাস্ত হয়।
কিন্তু নিখোঁজ ব্যক্তি মৃত হিসেবে প্রমাণ করার জন্য কোথায় কিভাবে আবেদন/মামলা ইত্যাদি করতে হবে তার কোন সুনির্দিষ্ট আইন নাই। ধরা যাক, ইসমাইল হোসেন নামের এক ব্যক্তির দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে, ১/ শাহাদাত হোসেন, ২/ আকমল হোসেন।
ইসমাইল হোসেনের মৃত্যু কালে তার বৈধ উত্তরাধিকারী হিসেবে দুই ছেলে সন্তানকে রেখে যান। পরবর্তীতে ইসমাইল হোসেনের ছোট ছেলে, শাহাদাত হোসেনের ছোট ভাই আকমল হোসেন দীর্ঘ ৭/৮ বছর ধরে নিখোঁজ হয়ে যান।
ইতোমধ্যে শাহাদাত হোসেনের বৈধ টাকার প্রয়োজন হওয়ায় তার পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রয় করার প্রয়োজন পড়ে, কিন্তু তার ছোট ভাই আকমল হোসেন নিখোঁজ হওয়ার পরেও মৃত হিসেবে প্রমাণ করতে না পারায় তার ছোট ভাই আকমল হোসেনের সম্পত্তি বিক্রয় করতে পারছে না।
এই অবস্থায় শাহাদাত হোসেন তার নিখোঁজ ছোট ভাই আকমল হোসেনের সম্পত্তি বিক্রয় করার জন্য মৃত প্রমাণ করার প্রক্রিয়া কি তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
প্রথমত, আকমল হোসেন নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, স্থানীয় চেয়ারম্যান অথবা কাউন্সিলর এর কাছ থেকে মৃত্যুর সনদ নিতে হবে।
তৃতীয়ত, সংশ্লিষ্ট দেওয়ানী আদালতে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে। উল্লেখ্য এখানে অপারাপর কোন উত্তরাধিকারী থাকলে তাদেরকে উক্ত মামলায় বিবাদী করতে হবে।
আদালতের রায়
এ বিষয়ে একটি মামলার ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে, ইসমাইল নামের এক ব্যক্তি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মার্কেটের একটি দোকান বরাদ্দ নেন। ক্যালকাটা গান (বন্দুক) রিপেয়ারিং ওয়ার্কস নামের ওই দোকানে বন্দুক মেরামত করা হতো।
ইসমাইল হোসেন দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে দোকানের মালিকানা দাবি করে ইফাতে আবেদন করেন খায়রুন নেসা নামের এক মহিলা তিনি আবেদনে নিজেকে ইসমাইলের ভাগ্নি হিসাবে একমাত্র উত্তরাধিকারী দাবি করেন।
কিন্তু ইফা তাঁকে ওই দোকানের মালিকানা দিতে রাজি না হওয়ায় তিনি ১৯৮৮ সালে ঢাকার সংশ্লিষ্ট দেওয়ানি আদালতে ঘোষণা মূলক মোকদ্দমা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত তাঁর মোকদ্দমা খারিজ করে দেন।
এরপর খায়রুন নেসা খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে ১৯৯৫ সালে হাইকোর্টে আপিল করেন সিভিল আপিল মামলা নং ৩৬৬/৯৫। আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট ১৯৯৭ সালের ২০মে রায় প্রদান করেন। বিজ্ঞ আপিল আদালতের রায় অনুযায়ী দোকানের মালিকানা পান খায়রুন নেসা।
মৃত্যুর তারিখে একজন ব্যক্তির মৃত্যুর অনুমান-উক্ত ব্যক্তিকে সাত বছর যাবত পাওয়া যায়নি- বিচার্য ঘটনা যে তারিখ সংঘটিত হয়েছে উক্ত তারিখে তার মৃত্যু হয়েছে মর্ম অনুমান করা হবে। [মোঃ আফসার (১৯৫৭) ৯ পিএলডি (পেশ)১]
লেখক: আইনজীবী, চট্টগ্রাম জজ আদালত।