জমিজমা নিয়ে পূর্ব বিরোধের জেরে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে জালিয়াতি করে লেনদেন সংক্রান্ত ভুয়া অঙ্গীকারনামা দেখিয়ে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করায় বাদীর বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। একইসঙ্গে অভিযোগকারীর দায়েরকৃত মামলা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
হবিগঞ্জের লাখাই আমলী আদালত-৭ এর বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জাকির হোসাইন সোমবার (৪ জুলাই) এ আদেশ দেন।
ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত ও ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত সৃজিত অঙ্গীকারনামার সাক্ষী এবং মুসাবিদাকারকসহ ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করণ ও সৃজিত অঙ্গীকারনামার মূল স্ট্যাম্প উদ্ধারসহ বিস্তারিত তদন্তের উদ্দেশ্যে আদালত নিয়মিত মামলা করার নির্দেশ দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লাখাই থানার এসআই মোঃ আব্দুল মান্নানকে দণ্ডবিধির ১৯৩, ২১১, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯,৩৪ ধারা সহ অন্যান্য ধারা উল্লেখপূর্বক আদেশে বর্ণিত আসামীগণ কে আসামী শ্রেণীভূক্ত করে আদেশ পাওয়ার ৩ দিনের মধ্যে এজাহার দায়েরের করার নির্দেশ প্রদান করেন আদালত।
আদালত সূত্রে জানা জায়, সোমবার (৪ জুলাই) মামলার তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিন অভিযোগকারী বিনা প্রতিকারে গর হাজির। মামলার অভিযোগকারী মোঃ নাছির মিয়া গত বছরের ৭ ডিসেম্বর মামলা দায়েরের পর হতে আদালতে সময়ের আবেদন দাখিল করে বরাবরের মতো অনুপস্থিত।
মামলার নালিশী বর্ণিত ১ম ও ২য় ঘটনার তারিখ ও সময়ে বিদেশ যাওয়ার জন্য ১নং ও ২নং আসামী অভিযোগকারীর নিকট হতে তিন লক্ষ টাকা গ্রহণ করে ও অঙ্গীকারনামা প্রদান করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।
এ মামলার ঘটনার বিষয়ে লাখাই থানার এসআই মোঃ আব্দুল মান্নান চলতি বছরের ১৭ মার্চ বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা দেখা যায়, উভয়পক্ষের মধ্যে জমি ক্রয় বিক্রয় নিয়ে লেনদেন হয় ও অঙ্গীকারনামা আছে এবং উক্ত জমি ক্রয় বিক্রয় নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে সর্ম্পকের টানাপোড়ন সৃষ্টি হলে অভিযোগকারীপক্ষে মিথ্যা ঘটনা ও লেনদেন দেখিয়ে এবং অঙ্গীকারনামা সৃজন করে অভিযোগকারী এই মামলা দায়ের করেন।
মামলা শুনানির ধার্য দিনে অভিযোগকারী ও তার নিযুক্ত কৌঁসুলি আদালতে উপস্থিত ছিলেন না এবং কোন দরখাস্তও দাখিল করেনি। ফলে তদন্ত প্রতিবেদন ও তদন্ত প্রতিবেদনের সাথে সংযুক্ত কাগজাতসহ তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখিত বক্তব্য সন্তোষজনক মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদন করেন আদালত। একইসঙ্গে মামলাটি ফৌজদারী কার্যবিধির ২০৩ ধারার বিধান মতে খারিজ করেন।
অতঃপর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ও সমগ্র নথি পর্যালোচনা করে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়, এই মামলার অভিযোগকারী ১ম অঙ্গীকারনামার গ্রহিতা হিসাবে ও আসামী মোঃ শহীদ মিয়া অঙ্গীকার দাতা হিসাবে ১০০ টাকার দুটি স্ট্যাম্পে আসামী মোঃ সানাউল্লাহ ও আসামী মোঃ শহিদ মিয়ার টিপ ব্যবহার করে বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে তিন লক্ষ টাকা গ্রহণ বিষয় উল্লেখ পূর্বক একটি অঙ্গীকারনামা সৃজন করেন এবং উক্ত ফটোকপি অঙ্গীকারনামা মামলা দায়েরের সময় অভিযোগকারী নিজে দাখিল করেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তের সমর্থন করে ৬ জন সাক্ষীর ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬১ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করেন এবং আসামী শহীদ মিয়া দলিল গ্রহীতা হিসাবে এবং অভিযোগকারী নাছির মিয়া দলিল দাতা হিসাবে ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের ১ কপি (ফটোকপি) দাখিল করেন। তদন্তের সমর্থনে তিনি অভিযোগকারী নাছির মিয়া অঙ্গীকারনামার দাতা ও আসামী মোঃ শহীদ মিয়া অঙ্গীকারনামার গ্রহীতা হিসাবে স্ট্যাম্পে সম্পাদিত একটি অঙ্গীকারনামার ফটোকপি দাখিল করেন।
সার্বিক পর্যালোচনায় আদালতের কাছে স্পষ্ট হয়, এই মামলার অভিযোগকারী মোঃ নাছির মিয়া, আসামী মোঃ শহীদ মিয়ার সাথে জমি ক্রয় বিক্রয় নিয়ে পূর্ব লেনদেন ও বিরোধ থাকায় আসামী মোঃ শহীদ মিয়া ও মোঃ সানাউল্লাহকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করার উদ্দেশ্যে তিন লক্ষ টাকা লেনদেনের একটি অঙ্গীকারনামা সৃজনপূর্বক এই মামলা দায়ের করেন।
এমতাবস্থায় ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত ও ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত সৃজিত অঙ্গীকারনামার সাক্ষী এবং মুসাবিদাকারক সহ ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করণ ও সৃজিত অঙ্গীকারনামার মূল স্ট্যাম্প উদ্ধার সহ বিস্তারিত তদন্তের উদ্দেশ্যে একটি নিয়মিত জিআর মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন আদালত।
নিয়মিত মামলা দায়েরের উদ্দেশ্যে এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লাখাই থানার এসআই মোঃ আব্দুল মান্নানকে এজাহারকারী হয়ে আদেশে উল্লেখিত পর্যালোচনা উল্লেখপূর্বক তার তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে দণ্ডবিধির ১৯৩, ২১১, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯,৩৪ ধারা সহ অন্যান্য ধারা উল্লেখপূর্বক আদেশে বর্ণিত আসামীগণকে আসামী শ্রেণীভূক্ত করে আদেশ প্রাপ্তির ০৩ (তিন) দিনের মধ্যে এজাহার দায়েরের করার নির্দেশ প্রদান করেন আদালত।