মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল: যারা আশেপাশের কয়েকটি দেশের কিছু উন্নত স্কুল দেখিয়ে আমাদের বলেন আমরা খুবই পিছিয়ে এটি তাদের জন্যে। বিশাল পরিসরে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা দক্ষতায় বাংলাদেশ এগিয়েছে, এবং একটি সমীক্ষায় দেখা যায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে। তবে আমাদের অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার আছে, তাই আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই।
বর্তমানে আমাদের দেশে পেশা, বৃত্তি, দক্ষতার সাথে সম্পর্কহীন সাধারণ যে শিক্ষা প্রচলিত আছে, বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষা, দেশের ভবিষ্যতের জন্য এটি একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে আসছে। শুনতে অপ্রিয় হলেও সত্য, আমাদের অর্থনীতির প্রকার অনুযায়ী এই সাধারণ শিক্ষা ভিত্তিক উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের এই বিশাল যুব সমাজকে কর্ম উপযোগী করা যাবেনা। এখানে অনেক পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানগুলো, নানান পাবলিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, দক্ষতা এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা নির্ভর সর্ট কোর্স, ডিপ্লোমা, ইত্যাদি চালু করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী সনাতনী অনার্স-মাস্টার্স দ্বারা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড আমরা পাবো না। ইতিমধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা পর্যায়েই দক্ষতা নির্ভর কারিকুলাম তৈরি করেছি আমরা, উচ্চ শিক্ষায় দক্ষতা ও বৃত্তিমূলক বিষয় এবং প্রশিক্ষণ সন্নিবেশিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি৷ শিক্ষার মানের পরিবর্তন সাথে সাথে দেখা যায় না।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে যে বিনিয়োগ হয়েছে এর সুফল আমরা এখন পাচ্ছি, এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে, অর্থনৈতিক চাহিদা অনুসারে আগামীতে আমরা আরো দক্ষ জনগোষ্ঠী পাবো। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, আজকের তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ কিন্তু এই কারনেই। ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষা পদ্ধতির বর্তমান প্রক্রিয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন এবং সেটিকে আমাদের অর্থনৈতিক চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে।
অন্যান্য দেশে আমরা দেখি, যে সমস্ত দক্ষতা দেশের অর্থনৈতিক চাহিদার সাথে সম্পর্কিত, তা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিষয় যাই পড়ানো হোক না কেনো, তাদের কোর্সগুলোতে সেই দক্ষতা গুলো দেয়ার চেষ্টা করে। এগুলোকে এসেন্সিয়াল স্কিল বা সফট স্কিল বলা হয়। বিষয় ভিত্তিক শেখানোর চাইতে “শিখতে শেখাকে” শেখানো হয়। যার ফলে বিষয় যাই হোক না কেনো, দক্ষতার জায়গায় শিক্ষার্থী কর্ম উপযোগী হয়ে উঠে। আমাদের এই উচ্চ শিক্ষা খাতে অনেক দূর এগুতে হবে। কর্ম সংশ্লিষ্টতা এবং দক্ষতা বিহীন শিক্ষার প্রায়োগিক মূল্য খুবই কম, এটি বিশ্ববিদ্যালয় ও পলিটেকনিক পর্যায়ে বুঝতে হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যত বেশি কর্ম সংশ্লিষ্টতা তৈরী করা যাবে এবং বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার সাথে তাদের পরিচয় করানো যাবে, শিক্ষার্থী ততই কর্ম উপযোগী এমনকি গবেষনায়ও মনোযোগী হবে।
এক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষকতায়, সরকারি বেসরকারি খাতের নানান পেশাজীবি, ব্যবসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, উদ্যোক্তা, তাদেরকেও আনতে হবে যাতে আমাদের শিক্ষার্থীরা শুধুই প্রতিষ্ঠানের গন্ডির ভিতরে দীর্ঘদিন আগে তৈরী নোটের সিলেবাসে পাশ করে উচ্চ জিপিএ নিয়ে, চাকরির বাজারে অদক্ষ কর্মী হিসেবে বেকারত্ব সমস্যা আরো বাড়িয়ে না তোলে।
লেখক: শিক্ষা উপমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী।