মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : ঘুষের ২৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকাসহ গ্রেপ্তার হওয়া কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি হুকুমদখল (এলএ) শাখার সার্ভেয়ার আতিকুর রহমান আদালতে দোষস্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
কক্সবাজারের সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদেশে গত মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক মোহাম্মদ আবুল মনসুর সিদ্দিকী ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানের জবানবন্দী গ্রহণ করেন।
কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশেক এলাহী শাহজাহান নুরী এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, রিমান্ডে থাকা সার্ভেয়ার আতিকুর রহমান স্বেচ্ছায়, প্রণোদিত হয়ে দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন।
গত ১ জুলাই সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে কক্সবাজার বিমানবন্দরের তল্লাশি গেট থেকে প্রবেশের সময় কক্সবাজার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি হুকুমদখল শাখার সার্ভেয়ার আতিকুর রহমান এর কাছে টাকা পাওয়ার বিষয়টি মুঠোফোনে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজকে জানান।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তাৎক্ষণিক সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কক্সবাজার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। কিন্তু ততক্ষণে সার্ভেয়ার আতিকুর ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়ায় তাকে আটকাতে পারেনি কক্সবাজার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
পরে ঢাকা হজরত শাহজালাল (র:) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে ঘুষের ২৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকাসহ সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানকে আটক করা হয়। সেখানে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি টাকার উৎস সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেননি।
একইদিন বিকেলে আতিকুর রহমানকে আরেকটি বিমানে করে পুনরায় কক্সবাজারে ফেরত এনে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আতিকুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখানেও তিনি টাকার উৎস সম্পর্কে কোন সদুত্তর দিতে না পারায় গত ১ জুলাই রাতে তাকে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হস্তান্তর করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
পরের দিন ২ জুলাই আতিকুর রহমানকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় কক্সবাজার আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পরে ৪ জুলাই তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে মামলা করে দুদক। দুদক কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশ্যে হস্তান্তর, স্থানান্তরের চেষ্টা করার অভিযোগে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২), ৪(৩) ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাটি দায়ের করেন। যার স্পেশাল মামলা নম্বর : ০৭/২০২২ ইংরেজি (কক্সবাজার)।
একই সাথে সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদক আদালতে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। রিমান্ডের আবেদন শুনানি শেষে আদালতের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল সার্ভেয়ার আতিকুর রহমান এর বিরুদ্ধে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
দুদক সমন্বিত কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ৫ দিনের রিমান্ডে কার্যকর করতে গত সোমবার (১৮ জুলাই) আতিকুর রহমানকে জেলা কারাগার থেকে বের করে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নেয় দুদক’র একটি টিম।
রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) আতিকুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘুষের ২৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকার উৎস বের করার চেষ্টা চালানোর সময় তিনি নিজে টাকা গুলো বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ঘুষের টাকা হিসাবে গ্রহণ করেছেন বলে স্বীকার করেন।
পরে এ বিষয়ে সার্ভেয়ার আতিকুর রহমান আদালতে স্বেচ্ছায় জবানবন্দী প্রদান করতে রাজী হলে, মামলার আইও মো. রিয়াজ উদ্দিন আদালতে এ বিষয়ে আবেদন করেন। আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল আবেদন মঞ্জুর করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবুল মনসুর সিদ্দিকী’কে সার্ভেয়ার আতিকুর রহমান এর জবানবন্দী গ্রহণের আদেশ দেন।
সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানের বাড়ি সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মিরপুর এলাকায়। তাঁর বাবার নাম আবদুর রহমান। তাঁর চাকরি বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হলেও তিনি সংযুক্তিতে গত দেড় বছর ধরে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের ভূমি হুকুম দখল (এলএ) শাখার অধীনে মহেশখালী উপজেলার দায়িত্বে ছিলেন। মহেশখালীতে সরকারের মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনসহ প্রায় ১৫টি বৃহৎ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন আতিকুর রহমানসহ তিনজন সার্ভেয়ার।
এ ঘটনায় পর গত ১৭ জুলাই কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি হুকুমদখল শাখা সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১২ জন সার্ভেয়ারকে একযোগে অন্যত্র বদলী করা হয়েছে।