মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : ইয়াবা পাচারের মামলায় আসামিকে জামিন করিয়ে দেওয়ার কথা বলে সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগে ২ টাউটের বিরুদ্ধে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি মামলা দায়ের করেছে।
সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) ও ফৌজদারী ভিজিলেন্স টিমের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাহাব উদ্দিন সাহীব বাদী হয়ে গত বুধবার (২০ জুলাই) কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-১ এ একটি ফৌজদারী অভিযোগ দায়ের করেন।
আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আবুল মনসুর সিদ্দিকী অভিযোগটি আমলে নিয়ে সেটিকে সরাসরি এফআইআর/মামলা (প্রাথমিক তথ্য বিবরণী) হিসাবে গ্রহণের জন্য কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে নির্দেশ দিয়েছেন।
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেল বিষয়টি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আসামীদ্বয় হলেন- কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের পশ্চিম হলদিয়া গ্রামের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত বদিউর রহমান এর পুত্র আলী আহমদ (৫৭) এবং রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের উত্তর টেকপাড়ার মৃত বক্তার আহমদ এর পুত্র নজরুল (৪৫)।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির ফৌজদারী ভিজিল্যান্স টিম নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার সময় চলতি বছরের ৩০ মে সকাল ১১ টার দিকে জনৈকা উম্মে কুলসুম শবনম ও নুর মোহাম্মদ নামক ব্যক্তিদের সাথে কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির দায়েরকৃত মামলার উল্লেখিত আসামীদ্বয়ের চরম বাকবিতন্ডা হতে দেখতে পান।
এসময় উম্মে কুলসুম শবনম ও নুর মোহাম্মদ সমিতির ভিজিল্যান্স টিমকে বলেন, উম্মে কুলসুম শবনমের স্বামী মোঃ ইউনুস জিআর : ৪৪৯/২০২১ (রামু) নম্বর ইয়াবা পাচারের মামলায় কারাগারে আটক আছে। মোঃ ইউনুসকে একমাসের মধ্যে জামিন করিয়ে দেওয়ার কথা বলে আসামী আলী আহমদ এবং নজরুল তাদের কাছ থেকে প্রতারণা করে জামিনের বিনিময়ে সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা নেওয়ার একটা অবৈধ চুক্তি করেছে। সাড়ে ১২ লক্ষ টাকার মধ্যে প্রতারক আলী আহমদ এবং নজরুলকে তারা নগদ ৭ লক্ষ টাকা এবং সোনালী ব্যাংক নাইক্ষ্যংছড়ি শাখার একটি চেকে সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা প্রদান করেছেন।
ভিজিল্যান্স টিম জানতে পারেন, আলী আহমদ এবং নজরুল আইনজীবী বা আইনজীবী সহকারী বা বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট কেউ নন। তারা ২ জন পেশাদার টাউট, কক্সবাজার আদালত এলাকার প্রতারক সিন্ডিকেটের সদস্য।
টাউটদ্বয় মোঃ ইউনুসকে অবৈধ চুক্তি মতো এক মাস তো দূরের কথা, এখনো পর্যন্ত জামিন করিয়ে দিতে পারেনি। ভিজিল্যান্স টিম এসব বিষয় অবহিত হওয়ার পর সাথে সাথে প্রতারক টাউটদ্বয়কে ধরে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনে এনে তাদের কাছ থেকে নগদ ৫ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা এবং সাড়ে ৫ লক্ষ টাকার সোনালী ব্যাংকের চেকটি উদ্ধার করে।
পরে নগদ টাকা ও চেক সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেল ও ভিজিল্যান্স টিমের সদস্যরা ভুক্তভোগী উম্মে কুলসুম শবনম ও নুর মোহাম্মদকে হস্তান্তর করে তাদের কাছ থেকে প্রাপ্তিস্বীকার পত্র নেন।
অবশিষ্ট নগদ ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে উম্মে কুলসুম শবনম ও নুর মোহাম্মদকে পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারকদ্বয় চলে যান। কিন্তু প্রতারকদ্বয় নগদ ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা ভুক্তভোগীদের আর পরিশোধ করেনি।
এ ঘটনায় বুধবার (২০ জুলাই) ১৮৬০ সালের ফৌজদারী দন্ড বিধির ৪০৬/৪২০/৪১৯/৩৪ ধারায় কক্সবাজার সদর আমলী আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলায় কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেল, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার, মামলার বাদী সহ সাধারণ সম্পাদক ও ফৌজদারী ভিলিল্যান্স টিমের আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাহাব উদ্দিন সাহীব, অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আমানুল হক, অ্যাডভোকেট রিদুয়ান আলী, অ্যাডভোকেট শবনম মুস্তারী, অ্যাডভোকেট বাবলু মিয়া, অ্যাডভোকেট মো: মঞ্জুর আলম, অ্যাডভোকেট ইফতেখার মাহমুদ, অ্যাডভোকেট মোঃ সেলিম, সমিতির প্রধান সহকারী মৃদুল কান্তি দে, সমিতির কম্পিউটার অপারেটর মো: শফিকুল ইসলাম, ভুক্তভোগী উম্মে কুলসুম শবনম ও নুর মোহাম্মদকে সাক্ষী করা হয়েছে। মামলায় উল্লেখিত ২ জন আসামী ছাড়াও আরো ৫/৬ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেল বলেন, কক্সবাজার আদালত অঙ্গন থেকে টাউট, বাটপার, প্রতারক নির্মূলে সমিতি বদ্ধ পরিকর। এ বিষয়ে ভিজিল্যান্স টিমের কার্যক্রম জোরদার করা সহ সমিতি আরো বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। যাতে বিচারপ্রার্থীরা সহজে বিচারিক সেবা পায় এবং বিচারাঙ্গন পরিচ্ছন্ন ও সেবাবান্ধব থাকে।
সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক, ফৌজদারী ভিলিল্যান্স টিমের আহবায়ক ও মামলার বাদী অ্যাডভোকেট সাহাব উদ্দিন সাহীব বলেন, বিচারপ্রার্থীদের সেবা সুনিশ্চিত করে তাদের নিরাপত্তা দিতে, কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির ফৌজদারী ভিজিল্যান্স টিম আদালত পাড়া থেকে টাউট, বাটপার, প্রতারক নির্মূলে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
এজন্য সম্বলিত প্রচেষ্টার উপর গুরুত্বারোপ করে এবিষয়ে অ্যাডভোকেট সাহাব উদ্দিন সাহীব বিচার প্রশাসন, বিচার বিভাগীয় স্টাফ, আইনজীবী, আইনজীবী সহকারী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।