সদ্য প্রয়াত জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া অত্যন্ত সৎ মানুষ ছিলেন উল্লেখ করে দেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা অকৃত্রিম ছিল।
আজ সোমবার (২৫ জুলাই) বেলা পৌনে ১১টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার, গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। হাজারো মানুষ জানাজায় অংশ নেন।
জানাজায় অংশ নিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা আজ এমন একজনকে বিদায় জানাচ্ছি, যিনি এদেশের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন। যাকে মানুষ ভালোবেসে বারবার নির্বাচিত করে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে পাঠিয়েছিলেন। এটা তাঁর প্রতি জনগণের ভালোবাসার প্রতিদান।
তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের ৩৪২ নম্বর রুমে জনাব ফজলে রাব্বী মিয়ার সঙ্গে বসেছি। প্রায় ১৪ থেকে ১৫ বছর আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। তিনি অত্যন্ত সৎ মানুষ ছিলেন। মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা অকৃত্রিম ছিল।
প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, আজকের এই দিনে আমি আপনাদের সবার কাছে অনুরোধ করবো, আপনারা ওনার জন্যে দোয়া করবেন। আল্লাহ ওনাকে জান্নাতবাসী করুক। ওনার পরিবারবর্গ ও আত্মীয়-স্বজন সবাইকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করুন।
জানাজায় অংশ নেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলম, জাতীয় সংসদের উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহুমুদ চৌধুরী, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
জানাজায় ইমামতি করেন সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের ইমাম আবু সালেহ মো. সলিমউল্লাহ।
জানাজা শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া আইন অঙ্গনের পথিকৃৎ ছিলেন। উনার কাছে এসে কেউ ফিরে যেতো না। তিনি জনগণের আইনজীবী ছিলেন। তিনি কখনো ফি’র জন্য দেনদরবার করতেন না।
ফজলে রাব্বী মিয়ার মতো গণবান্ধব আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ পাওয়া দুষ্কর উল্লেখ করে মেয়র বলেন, আইন অঙ্গনে দীর্ঘ পদচারণায় কোনোদিন তাঁর বিরুদ্ধে কেউ টুঁ-শব্দটিও করেনি। সাধারণ মানুষের সাথে তিনি এমনভাবে মিশে যেতেন, তার ফলশ্রুতিতে, তিনি তাঁর এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। ডেপুটি স্পিকার হয়েছেন। আজকে জানাজাতে আপনারা উপলব্ধি করছেন- সকল স্তরের মানুষ তাঁকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসতেন। সুতারাং তাঁর মতো এ রকম জনবান্ধব আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ পাওয়া দুষ্কর।
মেয়র এ সময় মরহুমের বিদেহ আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত দুইটার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফজলে রাব্বী মিয়া। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
তিনি গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য। সংসদ সচিবালয়ের উপপরিচালক (গণসংযোগ) স্বপন বিশ্বাস জানান, আজ সকাল সাড়ে আটটায় এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে ফজলে রাব্বী মিয়ার মরদেহের কফিন ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলম, সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, হুইপ ইকবালুর রহিম এবং ফজলে রাব্বী মিয়ার পরিবারের সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
স্বপন বিশ্বাস বলেন, দুপুরে হেলিকপ্টারে করে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে ফজলে রাব্বী মিয়ার নিজের এলাকা গাইবান্ধার সাঘাটায়। সেখানে বেলার তিনটায় ভরতখালী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে কফিন নিয়ে যাওয়া হবে গটিয়া গ্রামে। সেখানে আরেক দফা জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।