ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের মামলায় ভিকটিমকে প্রশ্ন বা জেরা করতে আদালতের অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রেখে ‘এভিডেন্স (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০২২’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে আইনে আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে ডিজিটাল কন্টেন্ট ব্যবহারের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (২৫ জুলাই) মন্ত্রিসভার বৈঠকে সাক্ষ্য আইন সংশোধনীর প্রস্তাবটি অনুমোদন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় সংযুক্ত ছিলেন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে বলেন, গত ১৪ মার্চ মন্ত্রিসভায় আইনটি তোলা হয়। তখন এর নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। আইনটি হালনাগাদের জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি প্রস্তাব আনে।
১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের দুটি ধারায় ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের মামলায় বাদীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার যে সুযোগ রয়েছে, সংশোধনে সেখানে পরিবর্তন আসছে বলে জানান তিনি।
আইন সংশোধনে তাতে পরিবর্তন আনার কথা জানিয়ে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “কারো চারিত্রিক বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে গেলে আদালতের কাছ থেকে পারমিশন নিতে হবে। আদালত যদি মনে করে, কারণ সবক্ষেত্রে যদি আউটলাইন করে না দেওয়া হয়, তাহলে অনেক ক্ষেত্রে খারাপ লোকজনও থাকতে পারে, যে ট্র্যাপ করে করে ভালো একজন লোককে ট্র্যাপে ফেলতে পারে। সেক্ষেত্রে ওই জিনিসগুলোর প্রয়োজন আছে। সেক্ষেত্রে আদালত বিবেচনা করবেন, চারিত্রিক বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে কি না।”
সাক্ষ্য আইন সংশোধনে মামলার বিচারে ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপনেরও সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সচিব বলেন, “(এটা করা হয়েছে) যাতে ডিজিটাল কোর্ট, ডিজিটাল সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হয়। কারণ এভিডেন্স অ্যাক্টে এটা ছিল না। আইনটির ক্ষেত্রে ‘ইনফরমেশন’ বা ‘ডেটা’ – এই জিনিসগুলো এখন ব্যবহার করা হবে।
“আগে শুধু ‘ইনফরমেশন’কে ‘ইনক্লুড’ করা ছিল। এখন যে সব ‘ইনফরমেশন’ আসবে সেগুলোকে সাক্ষ্য হিসেবে নেওয়া যাবে। কেবিনেট মিটিংয়ে এটা আলোচনা হয়েছে যে শুধু ইনফরমেশন না ডেটাকেও (সাক্ষ্য হিসেবে) নিতে হবে।”
তিনি বলেন, “আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। ডিজিটাল রেকর্ডকে কনসিডার করা হবে। এটা আগে ছিল না। আগে ছিল- কলা, হস্তরেখা এই জাতীয় জিনিসগুলো ছিল। কিন্তু ফরেনসিক এভিডেন্স অব ডিজিটাল রেকর্ড এটা ছিল না। শুধু ফরেনসিকটা ছিল। ডিজিটাল রেকর্ডকেও যুক্ত করা হয়েছে।”
প্রসঙ্গত, সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যখন বলাৎকার কিংবা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারিতে সোপর্দ হন, তখন দেখানো যেতে পারে যে অভিযোগকারিনী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা।
আর ১৪৬ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, তাহার চরিত্রের প্রতি আঘাত করে তার বিশ্বাস যোগ্যতা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করা যায়, যদিও এ রূপ প্রশ্নের উত্তরের দ্বারা সে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো অপরাধের সহিত জড়িত হতে পারে, কিংবা সে দণ্ডলাভের যোগ্য সাব্যস্ত হতে পারে, অথবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাহার দণ্ডলাভের যোগ্য সাব্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তথাপি অনুরূপ প্রশ্ন করা যাবে।
মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা দীর্ঘ দিন ধরে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এই ঔপনিবেশিক আইনটি সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
পরবর্তীতে ধর্ষণের শিকার নারীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা সংক্রান্ত সাক্ষ্য আইনের দুটি ধারা ১৫৫(৪) ও ১৪৬(৩) বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), নারীপক্ষ ও ব্লাস্ট্রের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন এই রিট দায়ের করেন।
রিট আবেদনে আইন মন্ত্রণালয়কে বিবাদী করা হয়। মামলাটি হাইকোর্টে শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।